Five pillars of Islam। five fundamental of islam । ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ
১। কালেমা।
২। নামাজ।
৩।রোজা।
৪। হজ্জ্ব।
৫। যাকাত।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ নিয়ে আলোচনা করার আগে আমাদের ইবাদত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা প্রয়োজন । ইবাদত এই শব্দটি সব মুসলমান হরহামেশাই বলে থাকে । কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ অনেকেই জানেনা পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতালা বলেন। অমা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনশা ইল্লা লিয়াবুদুন। সূরা আয-যারিয়াত 56
আমি জিন ও মানব জাতিকে কেবল আমারই ইবাদত ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।
এ থেকে আমরা সন্দেহাতীতভাবে বুঝতে পারি যে, মানুষের জন্য এবং জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত এবং বন্দেগী ছাড়া আর কিছুই নয়। এ থেকে আমরা অনুধাবন করতে পারি যে, ইবাদত শব্দটির প্রকৃত অর্থ জেনে নেওয়া কতটা জরুরি। আমরা যদি এই শব্দটির প্রকৃত অর্থ না জানি তাহলে পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তাআলার যে মহান উদ্দেশ্যে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তা আমরা কিছুতেই লাভ করতে পারবোনা। আর যে বস্তু তার উদ্দেশ্য লাভ করতে পারে না তা ব্যর্থ নিষ্ফল ফল হয়ে থাকে। তাই আমরা যদি ইবাদত করতে না পারি, তবে বলতে হবে আমাদের জীবন ব্যর্থ হয়েছে। তাই কেউ চাবেনা যে তার নিজের জীবন ব্যর্থ হয়ে যাক। এজন্যেই আশা করি এবাদত শব্দটির প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য জানার জন্য আপনারা বিশেষভাবে গভীর মনোযোগী হবেন এবং আপনাদের হৃদয় মগজের বদ্ধমূল করে নেবেন। কারণ মানব জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা একান্তভাবে এর ওপরই নির্ভর করবে। এবাদত শব্দটি আরবি শব্দ “আবদ”হতে উদ্ভূত হয়েছে, আবদ অর্থ দাস ও গুলাম। অতএব ইবাদাত এর অর্থ হবে বন্দেগী ও গোলামী করা।
কোন ব্যক্তি যদি কারো চাকর হয় এবং মালিকের কাছে পুরোপুরি বেতন আদায় করে, কিন্তু সঠিক ভাবে তার কাজ না করে, তবে বলতে হবে যে, সে নাফরমানী ও বিদ্রোহ করেছে। এবং ওই চাকরকে অকৃতজ্ঞ বলাই বাঞ্ছনীয়। তাই আমাদের সর্বপ্রথম জানতে হবে যে মনিবের সামনে চাকরে নেয় আমাদের কাজ করা, এবং তার সমীপে আনুগত্য প্রকাশ করার উপায় কি হতে পারে। বান্দা বা চাকর কে প্রথমত মনিবকে ‘প্রভু’ বলে স্বীকার করতে হবে এবং মনে করতে হবে যে তিনি আমাদের প্রকৃত বা আসল মালিক। যিনি আমাদেরকে দৈনিন্দন রুজি দান করেন এবং যিনি আমাদের হেফাজত ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন তাই তার অনুগত হওয়া আমাদের কর্তব্য। তিনি ছাড়া অন্য কেউ আমাদের আনুগত্য লাভের অধিকারী নয়।
ইবাদত শব্দটি তিনটি প্রক্রিয়া সমন্বয় কার্য সম্পন্ন হয়।
১: মুনিবের দাসত্ব স্বীকার।
২: মনিবের আনুগত্য।
৩: মনিবের সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করা।
এই তিনটি প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে যে কাজটি সম্পন্ন হয় আরবি ভাষায় তাকে “ইবাদত” বলে। এই তিনটি বিষয়কে মহান আল্লাহতালা একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ইবাদত দাঁড়া প্রকাশ করেছেন । প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরামের জাতীয় শিক্ষার মূল কথা হচ্ছে, “আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না” অর্থাৎ:আনুগত্য ও দাসত্ব লাভের যোগ্য সারা জাহানের মাত্র একজন আছেন, আর তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালা।
অনুসরণ করার জন্য একটি মাত্র বিধান বা আইন রয়েছে তা হল মহান আল্লাহর দান করা জীবন ব্যবস্থা, একটি মাত্রই প্রভু রয়েছে যার উপাসনা আরধনা ও পূজা আলোচনা করা যেতে পারে। তিনি হচ্ছে সকল নবীর, অলি আউলিয়ার এই পৃথিবীর সকল কিছুর মালিক একমাত্র প্রভু মহান আল্লাহ। ইবাদত শব্দের অর্থ আমরা গভীরভাবে স্মরণ রাখবো এবং কিছু প্রশ্ন করব এবং এর উত্তর মিলাতে চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
ক) যদি একটি কর্মচারী তার নির্ধারিত কর্তব্য পালন না করে মনিবের সামনে কেবল হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে, লক্ষবার কেবল তার নাম জপে, তার কোনো আদেশ পালন করে না তবে এই কর্মচারী সম্পর্কে আপনি কি বলবেন?
খ ) যদি কোন ফ্যাক্টরির মালিক তার কর্মকর্তাকে বলে যে ফ্যাক্টরির মধ্যে অনিষ্টকর কাজগুলো বন্ধ করতে, কিন্তু তিনি তা না করে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে?
গ) ফ্যাক্টরির মধ্যে চোর ধরার পরে সেই চোর কে শাস্তি দিতে বলে এবং পুলিশের কাছে দিতে বলে কিন্তু তিনি তা না করে কেবল মনিবকে সেজদা করতে থাকে, এমন চাকর সম্পর্কে আপনি কি মন্তব্য করবেন?
আপনি কি মনে করেন এমন কর্মকর্তা বা কর্মচারী প্রকৃতপক্ষে মালিকের আদেশ অনুযায়ী কাজ করছে? এমন কর্মচারী যদি আপনার হয় তাহলে আপনি কেমন আচরণ করবেন তা আমার জানা নেই। কিন্তু বড় আশ্চর্যের বিষয় যে, আল্লাহর কোন চাকর যদি এরূপ আচরণ করে তাকে আপনি কিভাবে বড় আবেদ, ইবাদতকারী ও বুজুর্গ এবং আল্লাহর অলি নামে অবহিত করেন আমার বুঝে আসেনা। আমরা অনেকেই হয়তো মনে করি, হাত বেধে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো, হাঁটুর ওপর হাত রেখে মাথা নোয়ানো, মাটিতে মাথা রেখে সেজদা করা এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট শব্দ উচ্চারণ করা শুধু এই কয়টি কাজেই প্রকৃত ইবাদত। আমরা অনেকে মনে করি রমজানের প্রথম দিন হতে শাওয়ালের চাঁদ ওঠার পর্যন্ত প্রত্যেক দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার বন্ধ রাখার নাম ইবাদত। আমরা হয়তো অনেকে এটাও মনে করি যে পবিত্র কোরআন শরীফের কয়েক রকম পাঠ করার নামই ইবাদত। কাবা শরীফে গিয়ে কাবার চারো দিকে তাওয়াফ করার নামই ইবাদত। মোটকথা এই ধরনের বাহ্যিক রূপ কে আমরা ইবাদাত মনে করে নিয়েছি। এবং এই ধরনের বাহ্যিক রূপ বজায় রেখে উপরোক্ত কাজগুলো কেউ সমাধা করলেই আমরা মনে করি যে ইবাদত সুসম্পন্ন হয়েছে এবং(অমা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনশা ইল্লা লিয়াবুদুন। সূরা আয-যারিয়াত 56) এর উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে ।
এখন আমরা নিজেদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী কাজ করতে পারি । কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এই যে মহান আল্লাহতালা আমাদেরকে যে ইবাদতের জন্যে সৃষ্টি করেছেন, এবং যে ইবাদত করার আদেশ আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। আমাদেরকে প্রত্যেকটি মুহূর্তে আল্লাহর আনুগত্য এবং পাওয়ার দেওয়া বিধান মেনে চলতে হবে, এবং আল্লাহর তৈরি করা আইনের বিরুদ্ধে এবং দুনিয়ায় যা কিছু প্রচলিত আছে তা অনুসরণ করতে আমাদের একেবারেই অস্বীকার করতে হবে। আমার আমাদের প্রত্যেকটি কাজ গতিবিধি আল্লাহর তৈরি করা নির্ধারিত সীমার মধ্যে হতে হবে। এই ধরনের জীবনে স্বয়ং জাগরণ পানাহার চলাফেরা কথা বলা আলোচনা করা, ঘুমানো ঘুম থেকে উঠা, শিক্ষা গ্রহণ করা জ্ঞানের পরিসীমাকে বাড়ানো, এমনকি নিজ স্ত্রীর কাছে যাওয়া এবং নিজের সন্তানদের কে স্নেহ করা ও ভালোবাসা ইবাদতের শামিল হতে হবে।
যেসব কাজকে আমরা দুনিয়াদারি বলে থাকি তাও ইবাদতের শামিল হতে পারে যদি প্রতিটি কাজকর্ম কামনা-বাসনা আল্লাহর তৈরিকৃত সীমার মধ্যে রাখা হয়। আমাদের সর্বসময় লক্ষ রাখতে হবে যে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের কোন কাজে আদেশ করেছেন কোন কাজে নিষেধ করেছেন কি করলে আল্লাহর সন্তুষ্ট হয় কোন কাজ না করলে আল্লাহর সন্তুষ্ট হয়।রাস্তা দিয়ে চলার সময় যদি একটি রাস্তার কাটা আল্লাহর সন্তুষ্ট হবে বিদায় সরিয়ে দেন তাহলে সেটাও ইবাদতের মধ্যে শামিল হবে, এবং কোন ব্যক্তিকে রাস্তা দেখানো আল্লাহর সন্তুষ্টি মনে করে করতে হবে, তাহলেও সেটা ইবাদতের মধ্যে গণ্য হবে।
প্রত্যেক মুহূর্তে সকল অবস্থায় আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করে চলার নামই ইবাদত। এখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, তাহলে নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদি কে কি বলা যায়? উত্তরে বলা যায় যে, এসব এবাদত বটে, এই ইবাদত গুলোকে আমাদের ওপর ফরজ করে দেওয়া হয়েছে, শুধু এজন্যই যে, আমাদের জীবনের প্রধান ও বৃহত্তম উদ্দেশ্য যে, প্রতিমুহূর্তে ও প্রত্যেক অবস্থায় আল্লাহর ইবাদত করা, সেই বিরাট উদ্দেশ্যে আমরা এসবের মাধ্যমে লাভ করতে পারব। নামাজ আমাদেরকে দৈনিক পাঁচবার স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমরা মহান আল্লাহতালার দাস, তারই ইবাদত আমাদের করা একান্ত কর্তব্য। এবার একটি মাস রোজা আমাদেরকে ইবাদত করার জন্য প্রস্তুত করে, যাকাত আমাদেরকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তুমি যে অর্থ উপার্জন করেছে তা আল্লাহতালার দান, তা তোমার খেয়াল খুশিমতো ব্যয় করতে পারো না। তারমধ্যে তোমার সৃষ্টিকর্তার হক আদায় করতে হবে। হজ মানুষের অন্তরে আল্লাহর প্রেম ও ভালোবাসা এবং তার শ্রেষ্ঠত্বের উদারতার চিত্র অংকিত করে, তা একবার অংকিত হলে সমগ্র জীবনে মন থেকে তা মুছে যেতে পারে না। এইসব ভিন্ন ইবাদত আদায় করার পর আপনার সমগ্র জীবন যদি আল্লাহর ইবাদত পরিগণিত হবার উপযুক্ত হয়, তবে আপনার নামাজ প্রকৃত নামাজ হবে, রোজা আসল রোজা হবে, যাকাত সত্যি কারের যাকাত এবং হজ সত্যি কারের হজ হবে এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
আর যদি এই উদ্দেশ্য হাসিল না হলে। রুকু-সেজদা, অনাহার-উপস, হজের অনুষ্ঠান পালন করা এবং যাকাতের নামে টাকা ব্যয় করলে আমাদের কিছুই লাভ হবে বলে মনে হয় না ।মানবদেহে প্রাণ থাকলে এবং চলাফেরা ও কাজকর্ম করতে পারলে নিঃসন্দেহে তা জীবিত মানব দেহ। অন্যথায় তা একটি প্রাণহীন দেহ মাত্র। একটি লাশের চোখ-কান হাত-পা সবকিছুই বর্তমান থাকে; কিন্তু প্রাণ না থাকলে, তাকে আপনারা মাটির গর্তে পুঁতে রাখেন। তেমনি ভাবে নামাজের আরকান আহকাম যদি সঠিকভাবে আদায় করা না হয়, রোজার শর্ত বলি ও যদি যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হয়, হৃদয় মনে আল্লাহর ভয়ের সঞ্চার না হয়, আল্লাহর প্রেম-ভালোবাসা এবং তাঁর দাসত্ব আনুগত্য করার ভাবধারা চলমান না থাকে, তবে আপনার ওপর ফরজ করা হয়েছিল তবে তাও একটি প্রাণহীন ও অর্থহীন জিনিস হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মানুষের ওপর বিভিন্ন এবাদত ফরজ করা হয়েছে, এসব কীভাবে এবং কি উপায় একজন মানুষকে আসল ও বৃহত্তম ইবাদতের জন্য প্রস্তুত করে সেই ইবাদতগুলো যদি মানুষ বুঝে শুনে আদায় করেন, তবে তা থেকে মানুষের জীবনে কি প্রভাব প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে তা পর্যায়ক্রমে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।
Shahadah (Faith)
To believe in no god but allah and that Muhammad is his prophet and the messenger of Allah.
No comments
Post a Comment