Header Ads

Header ADS

জামাতের সাথে নামাজ পড়ার ফজিলত ৷ জামাতের সাথে কেন নামাজ পড়বো?

 জামাতের সাথে নামাজ

ইতিপূর্বে আমরা শুধুমাত্র নামাজের বৈশিষ্ট্য এবং উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি ৷ এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে নামাজ কত বড় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত ৷ এই নামাজ মানুষের জীবনধারা কে পাল্টে দেয়৷ এবং এর মাধ্যমে একজন মানুষ ধীরে ধীরে নতুন মানুষের রূপান্তরিত হয়৷ এখন আমরা জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ৷ মহান আল্লাহতালা তার দয়া ও অনুগ্রহ করে এ একই জিনিসের মধ্যে সব রকমের নিয়ামত কিভাবে সংরক্ষণ করে রেখেছেনতা আমরা বুঝতে পারব ইনশাআল্লাহ৷ নামাজ মুমিনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবাদাত এবং সেই সাথে জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের আদেশ করে আল্লাহ পাক এটাকে দ্বিগুণ অপকারিতার ভান্ডার করে দিয়েছেন এবং তাতে এমন এক অপূর্ব শক্তি দান করেছেন, যা মানুষের মধ্যে আমূল পরিবর্তন সৃষ্টি করে ফেলে৷

জীবনের সর্বক্ষণ নিজেকে আল্লাহর বান্দা বলে মনে করা, অনুগত গোলামের নেয় মালিকের অধীন হয়ে থাকা এবং মালিকের হুকুম পালনের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকার নামই হচ্ছে ইবাদাত ৷ আর নামাজ মানুষকে এবাদত এর জন্যই প্রস্তুত করে৷  এবাদতের জন্যে মানুষের মধ্যে যত ধরনের গুণের দরকার, নামাজ তা সবই মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে দেয়৷  যেমন দাস হওয়ার অনুভূতি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং তাঁর কিতাবের প্রতি ঈমান, পরকালের প্রতি সুধীর বিশ্বাস, আল্লাহ ভীতি, আল্লাহকে আলেমুল গায়েব বলে স্বীকার করা, তাকে সব সময় নিজের কাছে অনুভব করা, আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য সর্বদা নিজেকে প্রস্তুত রাখা, আল্লাহর হুকুম আদেশ-নিষেধ ভালো করে জানা, নামাজ এসব এবং এই ধরনের বহু গুণ মানুষের মধ্যে তৈরি করে এবং মানুষকে মহান আল্লাহতালার খাঁটি বান্দা রূপে সৃষ্টি করে৷ 
 

একটু চিন্তা করলে বুঝতে পারা যায় যে, মানুষ যতই গুণাগুণ সম্পন্ন হোক না কেন, অন্য মানুষ যতক্ষণ তার সহযোগী ও সাহায্যকারী না পাবে ততক্ষণ সে আল্লাহর বন্দি বন্দেগীর হক পূর্ণরূপে আদায় করতে পারবে না৷  মানুষ মানুষের সাথে দিন-রাত জীবন যাপন করে, সব সময় যাদের সাথে একত্রে কাজ করে, আল্লাহর জীবন বিধান মেনে চলার ব্যাপারে তারা যদি সহযোগিতা না করে, তবে সে কিছুতেই আল্লাহর হুকুম পালনে সমর্থ হয় না৷  মানুষ দুনিয়ায় একা আসেনি৷  একা একই মানুষ কিছুই করতে পারে না৷  সে পাড়া-প্রতিবেশী ও সহকর্মী এবং মানুষের জীবনের চলার পথের সঙ্গী সাথীদের সাথে নানা ভাবে জড়িত৷  আল্লাহর হুকুম আহকাম কোন নিঃসঙ্গ একটি মানুষের জন্য নয়, বরং সকল মানুষের জন্য জীবনের সকল প্রকার সম্পর্ক সঠিকভাবে বজায় রাখার জন্যই আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে৷  এখন আল্লাহর হুকুম পালন করার ব্যাপারে যদি সবাই পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তবেই তারা একসাথে আল্লাহর হুকুম পালনকারী হতে পারবে৷  পক্ষান্তরে সকলে মিলে যদি আল্লাহর নাফরমানি করে কিংবা তাদের পারস্পারিক সম্পর্ক যদি এমন হয় যে আল্লাহর আদেশ পালনে পরস্পর সহযোগিতা না করে, তবে একজন লোকের পক্ষে সঠিকভাবে নিয়মিত আল্লাহর হুকুম পালন করা এবং আল্লাহর বিধান অনুসারে কাজ করা একেবারেই অসম্ভব৷  আমরা পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে জানতে পারি যে, মহান আল্লাহতালা কেবল আপনাকে আল্লাহর অনুগত হতে এবং আল্লাহর হুকুম পালন করতে বলেননি৷  বরং মানুষকে আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, আপনি সমগ্র দুনিয়াকে আল্লাহর অধীন ও অনুগত করে দেবেন৷  দুনিয়াতে আল্লাহর আইন জারি করবেন এই পৃথিবীতে যে যে জায়গায় শয়তানের আইন চলছে তা বন্ধ করতে হবে এবং যেসব স্থানে এক লা শরীক আল্লাহ তাআলার আইন, এর হুকুম কায়েম করবেন৷ 
একটু মনোযোগ সহকারে চিন্তা করলে একথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এত বড় উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মুসলমানদের কেবল মিলিত ঐক্যবদ্ধ হওয়ার যথেষ্ট নয়৷  মুসলমানদেরকে মিলিত হতে হবে ঠিক পন্থা অনুসারে৷ এবং সমস্ত মুসলমানদের এক জন নেতার অধীনস্থ হয়ে আল্লাহর দ্বীন পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতে হবে৷ এ বিষয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ জামাতের সাথে নামাজ পড়লে এইসব গুরুত্বপূর্ণ ভাবধারা নামাজিদের মধ্যে কেমন করে এই ভাবধারা জেগে উঠে তা একটু চিন্তা করে দেখুন৷

মুয়াজ্জিন যখন মসজিদে আজান দেন সেই আযান শুনামাত্র ই মুসলমানগন সমস্ত কাজকর্ম সেরে আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য মসজিদে চলে যায়৷ এই বিষয়টা বিরাট সৈন্যবাহিনীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়৷ এই আযান শুনামাত্র কাজকর্ম সেরে নিকটস্থ মসজিদে হাজির হবার জন্য মুসলমানদেরকে আদেশ করা হয়েছে যেন সব মুসলমান মিলিয়া আল্লাহর একটি সৈন্যদল পরিণত হতে পারে৷ এই নিয়মে প্রত্যেকদিন পাঁচবার আযান শুনামাত্র হাজির হওয়ার অভ্যাস করানো হয় এজন্যই যে, দুনিয়ার সকল প্রকার সৈনিকের তুলনায় এই কোথায় সেনাদের কর্তব্য অনেক বেশি, অনেক কঠিন৷ একজন মুসলিমকে প্রত্যেক মুহূর্তেই শয়তানি শক্তির সাথে লড়াই করতে হয় এবং প্রত্যেকটি মুহূর্তেই সেনাপতির আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়৷  এজন্যই মুসলমানদের দিন রাতের মধ্যে পাঁচবার খোদায়ী আহ্বান আযানের আওয়াজ আল্লাহর শিবির অর্থাৎ মসজিদের দিকে ছুটতে হয়৷ 

জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে একজন মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে মিলিত পরিচিত হন তা কোন সূত্রে? এই সূত্রে যে, মানুষ আল্লাহর তা'আলার বান্দা, এক রাসুলের অনুসারী, পবিত্র কুরআন হল তার কিতাব, তার গাইডলাইন, মানুষের ক্যাটালগ ৷ সমস্ত মুসলিমের জীবনের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন৷ সেই একই উদ্দেশ্য লাভ করার জন্য মুসলমানগন একই মসজিদে একত্রিত হন এবং এখান থেকে ফিরে যাওয়ার পরও মুসলমানগন প্রত্যেককেই সেই একই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য চেষ্টা করেন; প্রকৃতিক পক্ষে এই ধরনের পরিচয় এবং এরুপ সাহচর্য স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে এই খেয়াল জাগিয়ে দেয় যে, প্রত্যেক মুসলমান একটি জাতির অন্তর্ভুক্ত, এবং একটি দলের সিপাহী৷  এবং একজন আরেকজনের ভাই৷  দুনিয়ায় সকল মুসলমানের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য  এক৷ সকলেই পরস্পরের জীবন একে অপরের সাথে জড়িত৷

 

একজন মুসলমান যখন আর একজন মুসলমানের দিকে তাকাবেন তখন ঠিক চোখ মন অন্তর খুলে উদার দৃষ্টি তে তাকানো উচিত৷  শত্রু যে দৃষ্টিতে শত্রুকে দেখে থাকে মুসলমানদের কারো প্রতি সেভাবে তাকানো উচিত নয় বরং বন্ধু বন্ধুর দিকে তাকায় বাই যে চোখের দিকে তাকায় ঠিক সেই দৃষ্টিতে একজন মুসলমান অপর মুসলমানের প্রতি তাকিয়ে থাকেন৷  এভাবে তাকাবার ফলে আপনি যখন কোন বাইকে পুরাতন ছেড়া কাপড় পরিহিত দেখতে পাবেন, কাউকে বিশেষ চিন্তিত বিপদগ্রস্ত বা ক্ষুধার্ত দেখবেন, কাউকে দেখবেন অক্ষম পঙ্গুপক্ষাঘাতগ্রস্ত অন্ধ তখন মানুষের অন্তরে আপনাআপনিই সহানুভূতি দেয়ার উদ্যোগ হবে৷  ধনী লোকেরা গরীব অসহায় দুস্থদের দুঃখ অনুভব করবেন৷  ফকির- মিসকিন লোকের কাছে পৌছে নিজের দুরবস্থার কথা বলার সাহস পাবে৷  কারো সম্পর্কে যদি আপনি জানতে পারেন যে, সে অসুস্থ কিংবা বিপদগ্রস্ত বলে মসজিদে আসতে পারেনি তখন তাকে দেখতে যাবার জন্য আপনার মনে আগ্রহ হবে৷ বস্তুত কাজে মানুষের মধ্যে পরস্পরের মধ্যে গভীর ভালোবাসা সহানুভূতি সৃষ্টি করবে৷

 

আর একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা দেখতে পাই যে মুসলমানরা যে জাগার মধ্যে একত্রিত হন তা একটি পাকো পবিত্র স্থান৷  এই পবিত্র স্থানে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে মুসলমানগন একত্রিত হয়ে থাকে৷ গান বাজনার দল শরাবি আরজু আরেক দল একই স্থানে একত্র হয় বটে; কিন্তু তাদের সকলের মন অসৎ ইচ্ছায় পরিপূর্ণ থাকে৷  কিন্তু যারা মসজিদে সমবেত হন তাদের সাথে এদের তুলনা করা যায় না৷ কারণ মসজিদে আল্লাহর খাঁটি বান্দাগণ একত্রিত হয়ে থাকে আল্লাহর এবাদতের জন্যে মুসলমানদের এই সম্মেলন আল্লাহর ঘরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে৷  আল্লাহর সামনে বোন ডিগ্রি দাসত্বের কথা খালি মনে শিকার করার জন্যই এখানে সকলের সমবেত হন৷  আল্লাহর সামনে বন্দীগি দাসত্বের শিকার করার জন্য এখানে সকলে একত্রিত হন৷  স্থানে ঈমানদার লোকদের মনে আপনা আপনি গুনাহের জন্য লজ্জার অনুভূতি জাগ্রত হয়৷ এভাবে জামাতে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে মুসলমানের দুটি সংশোধন করতে পারবেন একজন অন্যজনের অভাব পূরণ করবেন৷  ফলে ধীরে ধীরে গোটা সমাজ সৎ নেককার হতে পারবে৷ 

মসজিদের মিলিত হওয়ার মাধ্যমে এক বিরাট বরকত রয়েছে৷  জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার উপকারিতা ও বরকত যে কত অসীম তা ভেবে দেখুন৷  নামাজে একই সারিতে সমান ভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন৷  তাদের কেউ বড় নয়, কেউ ছোট নয়, কেউ নিচু নয়- মহান আল্লাহতালার দরবারে, আল্লাহর সামনে সকল মানুষ একেবারে সমান৷  কারো হাত লাগলে কারো স্পর্শ লাগলে তাদের কেউ নাপাক হয়ে যায় না৷  এখানে  অস্পৃশ্যতার  তার কোনো অবকাশ নেই ৷ প্রত্যেক মুসলমানি পাক এবং পবিত্র; কারণ এরা সকলেই মানুষ, সকলেই এক মহান আল্লাহর বান্দা; একই দিন ইসলামের অনুসারী৷ এই নামাজের মধ্যে বংশ, পরিবার, গোত্র, দেশ, আর ভাষার আদৌ কোন পার্থক্য নেই৷ কেউ এক বাসায় কথা বলে আবার কেউ অন্য ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এসব পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তারা সকলে একই সারিতে দাঁড়িয়ে মিলিতভাবে আল্লাহর এবাদত করে৷ এর অর্থ এই যে, তারা সকলেই এক জাতির লোক৷ মুসলমান যখন সারি বেঁধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ান, তখন মনে হয় যেন একটি বিরাট সৈন্যবাহিনী বাদশাহ ওর সামনে কর্তব্য পালনের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন৷ কাতারে দাঁড়ানোর এবং একত্রে মিলে উঠা-বসা করা নামাজিদের মনে পড়ল ঐক্যভাবে সৃষ্টি হয়৷ এভাবে নামাজিদের ভিতর দিয়ে সকলকে আল্লাহর বন্দেগী করার অভ্যাস করানো হয়৷ নামাজে দাড়িয়ে সকল মুসলমানের দরখাস্ত মহান আল্লাহর দরবারে একই বাক্যে পেশ করে থাকে৷ এই নামাজ আমাদেরকে শিক্ষা দেয় প্রত্যেক মুসলমানকেই জামাতবদ্ধ ভাবে বসবাস করতে হবে৷

No comments

Powered by Blogger.