Header Ads

Header ADS

নামাজে হাত বাধার সঠিক নিয়ম


নামাজে বাম হাতের কব্জির ওপর ডান হাত রেখে দুই আঙ্গুল ধারা চেপে ধরা সুন্নত।এই আমলটি একাধিক সহি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, চার মাযহাবের ইমামগণ এই পদ্ধতিকে সুন্নত রূপে গ্রহণ করেছেন। নামাজ রত অবস্থায় ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরা সম্পর্কিত কিছু হাদিসঃ হযরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

লোকদেরকে এই আদেশ দেওয়া হতো যে,তারা যেন নামাজ রত অবস্থায় ডান হাত বাম হাতের উপরে রাখেন। ( সহি বুখারী-৭৪০,  মুসনাদে আহাম্মদ-২২৯১৫)

হযরত ওয়াইল ইবনে হুজুর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

আমি মনে মনে বললাম; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে নামাজ পড়তেন তা আমি লক্ষ করব। আমি লক্ষ করলাম যে, তার বললেন এবং উভয় হাত কান বরাবর উঠালেন।  তার পর তার ডান হাত বাম হাতের কব্জি ও কব্জি সংলগ্ন বাহুর উপর রাখলেন। ( নাসাঈ-৮৮৯,  আবু দাউদ-৭২৬-৭২৭,মুসনাদে আহমাদ-৪/৩১৮, সহি ইবনে খুজাইমা-৪৮০)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো;  উল্লেখিত হাদীসে ডান হাতের একটি অংশ ( অর্থাৎ তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহু) এর কথা বলা হয়েছে। এটি তখনই সম্ভব যখন ডান হাতের তালু কে বাম হাতের পিঠের ওপর রেখে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা কব্জি দরবে এবং অবশিষ্ট বাম হাতের কব্জি সংলগ্ন প্রসারিত করে দেবে। এ হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী ওয়াইল ইবনে জহুর (রা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাত ধরার সুন্নত পদ্ধতি মনোযোগের সাথে খেয়াল করে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। এই বিষয়টি সমর্থন পাওয়া যায় খুজাইমায়। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে খুযাইমা রহমাতুল্লাহ-(২২৩-৩১১ হিঃ) যিনি সোনালী যুগের একজন মুহাদ্দিস, সে তার গ্রন্থে উপরোক্ত হাদিসের ওপর শিরোনামঃ করেছেন।

ডান হাত বাম হাতের তালুর  পিঠ, কব্জি ও বাহুর অপর একইসাথে রাখবে।  আর এটা অপরের বর্ণিত পদ্ধতি ছাড়া সম্ভব নয়। অনুরূপ বর্ণনা সুনানে দারেমী তে সহীহ সনদে ওয়াইল ইবনে হুজুর রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন।

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডান হাত বাম হাতের কব্জির কাছে রাখতে দেখেছি ( সুনানে দারেমীঃ ১২৩৯)

হযরত  হুলভ আতাই রাঃ বলেনঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইমাম হতেন। তিনি ডান হাত দ্বারা বাম হাতটা চেপে ধরতেন। (তিরমিজি-২৫২, ইবনে মাজা-৮০৯, ইবনে আবী শাইবা-৩৯৫৫) এখানে বাম হাতের কনুই ধরার কথা বলা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে ইমাম তিরমিজি রহমতুল্লাহি বলেনঃ

 

হযরত  হুলব থেকে বর্ণিত হাদীসটি (হাসান)  এ হাদীসের অপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,  তামিম এবং পরবর্তী সকল আহলে ইলমের আমল।  তারা নামাজে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখতেন,  কেউ নাভির ওপরে রাখা পছন্দ করতেন, আবার কেউ নাভির নিচে রাখা পছন্দ করতেন,  তাদের নিকট উভয়টাই বহুল প্রচলিত ছিল ছিল।

এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হল,  পুরুষদের কেউ কেউ বুকের উপর হাত রেখেছেন এমন কোন প্রমান কারো থেকেই পাওয়া যায় না।

হযরত সাদ্দাদ ইবনে সূরা বিল রাঃ বলেনঃ 

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দণ্ডায়মান দেখলাম তিনি নামাজে বাম হাতের ওপর ডান হাতকে চেপে ধরে আছেন (এটি মুসনাদে বাজযার কাশফুল আসতার -৫২২, তাবারানী কাবির-৭১১১)  এ হাদীসে ডান হাত দিয়ে বাম হাত কে ধরার কথা বলা হয়েছে এক হাতের বাহু আরেক হাতের বাহুর উপর রাখার কথা বলা হয়নি।

হযরত জারির আদ্দাবী বলেন,  হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা যখন নামাজে দারাই তখন তার ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখতেন। ( মুসান্নাফে ইবনে আবি সাইবা- ৩৯৬৯)

উল্লেখিত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় যেঃ

১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতের উপর ডান হাত রাখতেন.
২।  ডান হাত বাম হাত চেপে ধরতেন।
৩।  বাম হাতের কব্জি চেপে ধরতেন। 

যার ফলে হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ উপরে বর্ণিত সবগুলো একসাথে আমল করে থাকেন এবং সেই পদ্ধতিকে অধিকাংশ মাযহাবের আলেমগণ অবলম্বন করেছেন।  হালবি রহমতুল্লাআলাই মুনইয়াতুল মুসল্লী এর শরাহ গুনইয়াতুল মুতাওয়াল্লি উল্লেখ করেছেন।

অর্থঃ সুন্নাত হলো পূর্বোল্লিখিত হাদীসগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন। হাত ভিজিয়ে রাখা ও বাধা এই দুটির ওপর একসঙ্গে আমল করা। কারণ,  কিছু  হাদিসে চেপে ধরার কথা এসেছে, আবার কিছু হাদিসে হাত হাতে রাখার কথা এসেছে,  আর কিছু হাদিসের বাহুর ওপর হাত রাখার কথা এসেছে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের পদ্ধতি হলো।  ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর পিঠের ওপর রাখবে,  বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা গোল বৃত্তের নেয় বানিয়ে কব্জি ধরবে এবং অবশিষ্ট তিন আঙ্গুল বাম হাতের ওপর বিছিয়ে দেবে।  তাহলে হাতের উপর হাত রাখা,  বাহুর উপর হাত রাখা,  এবং ডান হাত বাম হাত ধরা সবগুলোই বাস্তবায়ন হবে ইনশাল্লাহ। ( গুনিয়াতুল মুতাওয়াল্লিঃ ৩০০) একজন পাঠক অতি সহজেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে যে,  হানাফি মাজহাব অনুযায়ী সবগুলো হাদীসের উপর আমল হয়ে যায়। আর প্রকৃতপক্ষে এটাই হলো হাদিসের অনুসরণ।  এসকে গ্রহণ করে অন্য হাদীসকে ত্যাগ করা,  বা উপহাস করা এটা হাদিস মানা নয়।  বরং সেটা হবে হাদিস মানা নামে তামাশা করা ও হাদীস অস্বীকার করা।  গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা  বুখারী শরীফের হাদিস থেকে দলিল রূপে গ্রহণ করে বাম হাতের কনুই পর্যন্ত ডান হাতকে বিস্তৃত করে দেন, সেটাকে আমরা প্রথম দলিল রূপে গ্রহণ করেছি।  ওই হাদীসটি সম্পর্কে সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহ আলাই স্বীয় গ্রন্থ ফাতহুল বাড়িতে বলেছেনঃ

অর্থাৎ;  বাহুর কোন জায়গায় হাত রাখতেন সেটা এই হাদিসে অস্পষ্ট, আবু দাউদ নাসাঈ শরীফে বর্ণিত ওয়াইলরা  এর হাদিসের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে তা নিম্নরূপঃ অতঃপর তিনি তার ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর  পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখলেন।  ইমাম ইবনে খুযাইমা রহমাতুল্লাহ আলাই ও অন্যান্যরা এটি কে বলেছেন।  বুখারী শরীফ সালাত আদায়ের শেষদিকে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অনুরূপ আষাঢ় এর উল্লেখ সামনে আসছে ( ৭৪০ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়) 


No comments

Powered by Blogger.