Header Ads

Header ADS

নামাজে একাধিকবার রফেদাইন বা হাত উঠানো নিয়ম।

 নামাজে রফেদাইন এর সঠিক নিয়ম এবং সুন্নতি তরিকা।


একাধিক সহি হাদিস এবং বেশি সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহীনের কর্মধারা র মাধ্যমে এ কথা প্রমাণ করে যে,নামাজের শুরুতে প্রথম তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত তোলা সুন্নত। তাছাড়া নামাজের মধ্যে রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় ও তৃতীয় রাকাতে উঠার সময় হাত তোলা সুন্নত নয়। যেমনঃ দুই সিজদার মাঝখানে সাহু সিজদার সময় এবং নামাযে বসা থেকে দাঁড়ানোর সময় হাত উঠানো সুন্নত নয়। এই সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করব ইনশাল্লাহ। পবিত্র কুরআনের সূরা আল মুমিন এর-১-২ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহতালা বলেনঃইবনে আব্বাস রা এ আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ এখানে  এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, অত্যন্ত একাগ্রতা ও বিনম্রভাবে নামাজে দাঁড়ানো, ডানে বামে না দেখা এবং রফেদাইন না করা,অর্থাৎ বারবার হাত না উঠানো। ‘তাফসীরে ইবনে আব্বাস ১/২৮৪’ হযরত হাসান বসরী রাহ এ আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ এ আয়াতে দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রথম তাকবীর ব্যতীত নামাজে আর হাত না উঠানো। ‘ তাফসীরে সমরনন্দী-২/৪০৮’

দ্বিতীয় রেফারেন্সঃ হযরত বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ শুরু করার সময় কানের কাছাকাছি হাত উঠাতেন, এরপর আর কোথাও হাত উঠাতেন না. ‘ আবু দাউদ-752, মুসান্নাফে ইবনে আবী  সাঈবা-2455,মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-2530, দারাকুতনি-22’ মুহাদ্দিস জাফর আহমদ উসমানী রহমতুলা আলাহি বলেন হাদীসটি হাসান এবং এর দ্বারা দলিল দেওয়া যায়।

রেফারেন্স নাম্বার ৩: হযরত আলকামা রাঃ থেকে বর্ণিত, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামাজের মত নামাজ পড়বো না? এ কথা বলে তিনি নামাজ পড়লেন এবং তাতে শুধু প্রথমবারই হাত তুলেছিলেন। ‘আবু দাউদ-৭৪৮, তিরমিজি-২৫৭,নাসাই শরীফ-১০৫৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২৪৫৬,মুসনাদে আহমাদ-৩৬৮০।

চতুর্থ নং রেফারেন্সঃ হযরত ইবনে আব্বাস রাদি আল্লাহ আনহু বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হযরত আবু বক্কর ও হযরত ওমর এর পিছনে নামায আদায় করেছি,  তাদেরকেও তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত হাত উঠাতেন না। ‘ বায়হাকী-৮২১,ইলাউস সুনান-৩/৬৮’। মুহাদ্দিস আহমাদ সাকির এ হাদীস সম্পর্কে বলেন, ইবনে হাজম এবং অন্যান্য হাফিজুল হাদিস এই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।  কেউ কেউ এর বর্ণনা গত ত্রুটির কথা উল্লেখ করে শেষে বলেছেন,  বস্তুত সেগুলো ত্রুটি হিসেবে বিবেচিত নয়। আল্লামা আলাউদ্দিন আত্মরুকমানি রাহ বলেন, এ হাদীসের সকল রাবি সহি মুসলিমের  রাবি।  আল জাওহারুন নাকি-২/৭৮। যা এই ভাষায় বর্ণিত হয়েছেঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু প্রথমবার হাত উঠিয়েছেন। এ হাদীসটির ব্যাপারে ইবনে মুবারক রহঃ  আপত্তি করেছেন,  পূর্ব বড় ব্যাপার নয়।  এই দুই বর্ণের মধ্যে পার্থক্য না জানার কারণে অনেক আলেম বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে  এবং অন্যকে বিভ্রান্ত করেছেন। নসবুর রায়াহ-১/৩৪২। এজন্য সুনানে তিরমিযীর বিভিন্ন নুসখায় দ্বিতীয় বর্ণনাটি ভিন্ন শিরোনামের অধীনে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং সেখানে ইবনুল মুবারক এর মন্তব্য রয়েছেঃ অতএব তার মন্তব্য আলোচ্য হাদিস সম্পর্কে নয়, এই বিষয়টি উল্লেখ আছে জামে তিরমিজি-২/৪২, তাহাকে আহমেদ শাকির, পর্যালোচনা বিশেষভাবে লক্ষণীয়, তিনি বলেন  রফিদ আইন বিষয়ে এক শ্রেণীর মানুষ জয়ীফ হাদিস কে সহি আর সহীহ হাদীসকে জয়ীফ সাব্যস্ত করার প্রয়াস পায়।  তাদের অধিকাংশই নীতি ও ইনসাফ বিসর্জন দিয়ে থাকে। ‘ জামে তিরমিজি মহাকাশ মুহাক্কাক-২/৪২’ বর্তমান সময়ে আহলে হাদিস বন্ধুগণ তাদের সমশ্রেণীর পূর্বের মতোই সহজ-সরল জনগণকে একথা বুঝাতে চেষ্টা করেছেন যে, রফাদাইন না করার বিষয়ে যেসব হাদীসে এসেছে সেগুলো যইফ। তাদের এই কথায় যাতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত না হয়, সেজন্যই কওমি ওলামা একেরাম এই বিষয়ের হাদীসগুলোর সঙ্গে বড় বড় মুহাদ্দিসের স্বীকৃতিও উল্লেখ করে থাকে।

৫ নম্বর রেফারেন্স ও দলিলঃ হযরত জাবির ইবনে সামুরা রা বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে, ‘ নামাজে রফেদাইন করতে দেখে বললেন ব্যাপার কি? তোমরা দেখছি অবাধ্য ঘোড়ার লেজের মত করে হাত ওঠাচ্ছ! নামাজে স্থির থাকো। সহিঃ মুসলিমঃ  হাদিস নং-৪৩০। এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থিরতার সঙ্গে নামাজ আদায় করার কথা বলেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথার মাধ্যমে এই বিষয়টি বেরিয়ে আসে যে নামাজের মধ্যে রফেদাইন স্থিরতা পরিপন্থী, তাই আমাদের কর্তব্য হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশনা মত স্থিরতার সঙ্গে নামাজ আদায় করা। এখানে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে,  হযরত জাবির রাঃ আনহু থেকে সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানায় সালামের সময় রফেদাইন করতে বা হাত উঠাতে নিষেধ করা হয়েছিল। সেই হাদিসে‘ অবাধ্য ঘোড়ার লেজের নেয়’  কথাটি এসেছে এখান থেকে কেউ কেউ ধারণা করেন যে, উভয় বর্ণনার বিষয়বস্তু এক, কাজেই সালামে হাতের ইশারা নিষেধ হলেও অন্য সময়ে রফেদাইন নিষেধ হয়নি। তাদের এই ধারণা আদৌ সঠিক নয় তার কারণ হলো এই দুটো হাদিসি সম্পূর্ণ ভিন্ন হাদিস এবং দুই হাদিসেই ভিন্ন ভিন্ন বিধান রয়েছে।  এই বর্ণনা দুটির মধ্যে চারটি পার্থক্য উল্লেখ করা যেতে পারে যেমনঃ

০১। এ হাদীসের মাধ্যমে স্পষ্ট আকারে এটা বুঝা যায় যে সাহাবীগণ একাকী নামাজ পড়ছিলেন, এমত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তাদেরকে বারবার হাত উঠাতে দেখে ওই কথা বলেছিলেন। অপর হাদীসটিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে জামাতে নামাজ পড়েছিলেন এবং সালাম ফিরানোর সময় তারা হাত দিয়ে ইশারা করেছিলেন।

২। এই হাদীস থেকে এটা বুঝা যায় যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের অপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন নামাজের মধ্যে হাত উঠানোর কারণে, পক্ষান্তরে অপর হাদীসটিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন হাত উঠানোর কারণে নয় বরং সালামের সময় ডানে-বামে হাত দ্বারা ইশারা করার কারণে।

৩।  এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার হাত উঠিয়ে শান্ত থাকার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। অথচ অপরাধীতে সালাম ফিরানোর পদ্ধতি শিখিয়েছেন।

৪। সালামের সময় হাত উঠানো ব্যক্তিকে একথা বলা যায় না যে তুমি নামাজে স্থির থাকো। কারণ সালামের দাঁড়াতো নামায আদায়কারী ব্যক্তি নামাজ থেকে বের হয়ে যায়। তাই দ্বিতীয় বর্ণ নয় যেখানে সালামের সময় হাত উঠানোর কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাতে এই বাক্যটি নেই।

দুটি বর্ণনার মধ্যেই এতগুলো পার্থক্য থাকা সত্বেও বলা যায় যে, দুটি হাদিস এর বিষয়বস্তু কি একি? এটা কিভাবে সম্ভব যে, হযরত জাবের রাঃ এর মত একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন  শব্দে, ভিন্ন মাসে, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বর্ণনা করবেন? সাহাবীগণ হাদীস বর্ণনার বিষয়ে খুবই তৎপর ও সতর্ক  থাকতেন।  তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী বর্ণনা করার সময় কোন ধরনের সংযোজন- বিয়োজন করা থেকে বিরত থাকতেন। তাই তা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, এই দুটি হাদীস সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং উভয় হাদীসের বিষয়বস্তু ও ভিন্ন। অতএব সালামে যেমন হাতের ইশারা নিষেধ, তেমনি ভাবে রুকুর সময় হাত উঠানো অন্যান্য হাদিস দ্বারা নিষেধ। হাদিসকে সালামের সময় হাত উঠানো নিষেধ এই মর্মে পেশ করা যাবে না।  আহআক-হাদিস বন্ধুগন করে থাকেন।

ষষ্ঠ রেফারেন্সঃ  হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি,  তিনি যখন নামাজ শুরু করতেন তখনকার বরাবর হাত ওঠাতেন।  আর যখন রুকু করতে চাইতেন এবং রুকু থেকে উঠতেন তখন হাত উঠাতেন না, দুই সিজদার মাঝে ও না।  ইমাম বুখারীর উস্তাদ হুমাইদি রহমাতুল্লাহ আলাই তার মুসনাদে হাদিস এনেছেন এবং এর সনদ সহীহ। মুসনাদে হুমাইদি-৬১৪।

৭ নং রেফারেন্সঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজ শুরু করতেন তখন একবার রফেদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না।  ‘বায়হাকী আল-খিলাফত’ অষ্টম রেফারেন্সঃ আব্বাস ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজ শুরু করতেন তখন শুধু নামাজের শুরুতেই উভয় হাত তুলতেন, এরপর নামাজ শেষ করা পর্যন্ত আর কোথাও হাত তুলছেন না। ‘নাসবুর রায়াহ- ১/৪০৪। এই হাদীসটির সনদ সম্পর্কে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি রহমত উল্লাহ বলেন, এর বর্ণনাকারী সকলেই বিশ্বস্ত।

৯ নম্বর দলিলঃ খোলাফায়ে রাশেদীন রফেদাইন করেননি- প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নিমাভী রহঃ খোলাফায়ে রাশেদীন এর কর্মধারা বিষয় নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে পৌছেছেন যে,  খোলাফায়ে রাশেদীন শুধু প্রথম তাকবীরের সময় ‘রফেদাইন’করতেন।  অন্য সময়ে রফাদাইন করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।  এর বিপক্ষে যে বর্ণনা গুলো পাওয়া যায় সেগুলো কোনটাই ত্রুটিমুক্ত নয় সুতরাং সেগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। খোলাফায়ে রাশেদীনের পর আইম্মায়ে কিরামগণ মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী।  তারা ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সত্তিকারের অনুসারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সুন্নাহকেও নিজের সুন্নাহার মতো অনুসরণীয় বলে ঘোষণা করেছেন। কেননা তাদের সুন্নাহ ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ থেকেই গৃহীত। তাই তারা যখন নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে হাত উঠাতেন না, তখন একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে তাদের কাছেও নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে হাত উঠানো গ্রহণযোগ্য নয়। বস্তুত প্রকৃতপক্ষে এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ।

আহলে হাদিস ভাইদের দলিল ও সেগুলো পর্যালোচনা। 

আহলে-হাদিস বন্ধুগণ যেসব হাদীস পেশ করেন সেই হাদীসগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:কিছু আছে প্রবীণ সাহাবায়ে কিরাম থেকে বর্ণিত এবং কিছু নওমুসলিম সাহাবা থেকে, এই দুই ধরনের হাদিস সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহঃ:

১। প্রবীণ সাহাবীদের থেকে বর্ণিত হাদিসঃ  আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা এর হাদিসঃ এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে,  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে যাওয়ার সময় এবং উঠার সময় হাত তুলতেন। সহি বুখারী-৭৩৫, সহিঃ মুসলিম-৩৯০। এই হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু এর মৌখিক বর্ণনা এবং বাস্তবতার আমলি বর্ণনা দেখুন,  তাহলে এই হাদীসের সাওয়াল সহজেই বুঝে আসবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা এর বিশিষ্ট তিনজন শাগরিদ হযরত মুজাহিদ, আব্দুল আজিজ, আবুল আলিয়া রহঃ  সকলেই তার আমল শুধুমাত্র নামাজের শুরুতে হাত উঠানোর কথা বর্ণনা করেছেন।  ইবনে ওমর রা এর বিশিষ্ট মুজাহিদ রহ বলেনঃ আমি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদি আল্লাহ আনহু কে শুধুমাত্র নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন সময় হাত তুলতে দেখি নি। ‘ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা- ২/৪১৭, ২৪৫২,২৪৬৭। জাওহারুল নাকি কিতাবে এই শক্তিকে সহি বলা হয়েছেঃ  আব্দুল আজিজ এর বর্ণনার জন্য দেখুন মুতা-১০৮।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু বলেন, আমরা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মক্কায় থাকাকালীন নামাজের শুরুতে এবং নামাযের ভিতরে রুকুর সময় হাত উঠাতাম।  তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হিজরত করে মদীনায় চলে আসলেন,  তখন নামাজের মধ্যে রুকুর সময় হাত উঠানো বন্ধ করে দিলেন। শুধুমাত্র নামাজের শুরুতে হাত উঠানো অব্যাহত রাখলেন।  এই বর্ণনাটি পাওয়া যায়- আখবারুল ফুকাহা ওয়াল মুহাদ্দিসীন লিল কাইরুনী পৃষ্ঠা নং ২১৪  হাদিস নং ৩৭৮।

যে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা এর হাদীস দ্বারা আহলে হাদীস বন্ধুগণ দলিল দিচ্ছেন, তার স্বাদ গ্রহণ তার বছরের পর বছর এর আমল বর্ণনা করেছেন যে,  তিনি নামাজের শুরুতে ছাড়া নামাজের মধ্যে কোথায় হাত তুলছেন না।কোন সাহাবী নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস বর্ণনা করার পর কি নিজেই তার বিরুদ্ধাচরণ করতে পারেন?  কখনোই না।  সুতরাং বুঝতে হবে যে,  নামাজের ভিতরে হাত তোলার বিধানটি মূলত মদীনায় আসার পর রহিত হয়ে গিয়েছিল,  যেমনটি তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদি আল্লাহ আনহু এর মৌখিক হাদিসের বর্ণনা করেছেন।  কাজেই আহলেহাদীছ বন্ধুগণ যে হাদীসটি পেশ করে থাকেন যদিও তার সনদ বুখারী ও মুসলিমের কিন্তু সেটি মূলত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা এর মক্কী জামানার হাদিস,  হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনা হিজরত এরপর রহিত হয়ে গেছে।  হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মক্কায় অবস্থানকালীন হাদিস, যা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনা হিজরত এরপর রহিত হয়ে গিয়েছে। যে কারণে পরবর্তী সময়ে তিনি একবার মাত্র হাত তুলতেন।  কোন হাদীসের সনদ সহীহ হলেই সেটা আমলযোগ্য প্রমাণিত হয় না।  যদি তার হুকুম রহিত না হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আমলযোগ্য হয়।  তাছাড়া আহলে হাদিস বন্ধুরা যেভাবে রফেদাইন করে থাকেন অর্থাৎ ‘ রুকুতে যাওয়ার সময়, রুকু থেকে উঠার পর সিজদা থেকে উঠে, এই রফেদাইন ইবনে ওমর রা এর হাদিস থেকে সাবেত হয়না।  কেননা হযরত ইবনে ওমর রা এর হাদিসে শুতে যাওয়া ও রুকু থেকে উঠার সময় রফেদাইন এর কথা উল্লেখ আছে।  সিজদা থেকে উঠে রফেদাইন করার কথা উল্লেখ নেই।  সুতরাং তাদের আমলের পক্ষে দলিল হয় না।  এই সহজ-সরল কথাটি না বুঝতে পারায় আহলে হাদিস বন্ধুগণ পড়েছেন বলেই অনেক আলেম ওলামা মনে করে।

নওমুসলিম সাহাবীদের বর্ণিত হাদিসঃ

মালিক ইবনে রাঃ থেকে বর্ণিতঃ

এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময়, সিজদায় যাওয়ার সময় এবং সিজদা থেকে উঠার সময় হাত তুলতেন। 

ওয়াইল ইবনে হুজুর রাদিয়াল্লাহু  থেকে বর্ণিতঃ


এ হাদীসে দেখা যাচ্ছে যে, নামাজের ভিতরের রুকুতে যাওয়ার সময়,  রুকু থেকে উঠার পর ও সিজদায় যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তুলতেন। মুহাল্লা-৩-৮।

এখানে চিন্তা করার বিষয় হলো, শুধু নওমুসলিম সাহাবীগণ হাত উঠানোর হাদীস বর্ণনা করেছেন। অপরদিকে, প্রবীণ সাহাবীগণ যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাজকর্ম অনুসরণ করার জন্য ব্যাকুল এবং পাগলপারা থাকতেন, বিশেষ করে চার খলিফার মধ্যে একজন ও নামাজের ভিতরে হাত উঠানোর হাদিস বর্ণনা করেননি বা নিজেরা আমল করেন নি।  যেমন চার খলিফার আমল দেখুনঃ

এখানে স্পষ্ট হলো যে,  চার খলিফার কেহই নামাজের ভিতরে তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত হাত তুলছেন না ( আশা রোস  সুনানঃ ১৪৪) এর দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে,  পুরনো সাহাবা যাদের তাওহীদের বিশ্বাস মজবুত হয়ে গিয়েছিল,  তাদের জন্য নামাজের ভিতরে হাত উঠানো নিষেধ হয়ে গেলেও যারা নতুন তাদের জন্য নামাজের ভিতরে হাত উঠানো নিষেধ হয়নি।  কারণ একদিকে তারা নতুন মুসলমান হওয়ার কারণে বারবার শিরকের ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা আসত।

কেননা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তারা অনেক দেব-দেবীর পূজা করতেন।  অপরদিকে হাত উঠানোর অর্থ হচ্ছে,  আল্লাহ ব্যতীত বাতিল আছে সবই পিছনে ফেলে বাতিল করে দেওয়া।  এ কারণেই যখন কোন মুসলিম তার গোত্রের প্রতিনিধি হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে দেখতে আসতেন তখন তাদের শিরকের দূর করার শিক্ষা দেওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের ভিতরে রুকুতে সেজদায় হাত উঠিয়ে দেখাতেন,  যাতে প্রয়োজনে তারা এ প্রথায় শিরকের কুমন্ত্রণা দূর করতে পারেন।  এটা শুধু তাদের সাথেই  সীমিত ছিল।  এজন্যই এটা সত্বেও প্রবীণ সাহাবীগণ নামাজের মধ্যে হাত উঠাতেন না বা অন্যদের শেখাতেন না।  কারণ তারা বুঝতেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা নতুন মুসলমানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য করেছেন, যা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। সারকথা হলো,  নামাজের মধ্যে রুকু সিজদায় হাত উঠানো নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও নওমুসলিমদের তাওহীদ মজবুত হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য সাময়িকভাবে এর অনুমতি ছিল।  কাজেই এখন যদি কোনো অমুসলিম এটা করতে চায় তাহলে তাকে নিষেধ করা হবে না।  তবে পুরনো মুসলমানদেরকে এটা নিষেধ করা হবে।  কারণ এটা তাদের জন্যে আর প্রয়োজন নেই।  এই সূক্ষ্ম কথাটি অনেক মুসলমান বন্ধুগণ না বুঝতে পারায় সকল মুসলমানদের ওপর এটা ছাপাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।  মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন।

 তাছাড়া মালেক ইবনে হোয়াইরিস রাঃ এর হাদীস ও তাদের দলিল হয় না। কেননা সেখানে সিজদা করার সময় রফেদ আইন এর কথা উল্লেখ আছে।  অথচ তারা সিজদা করার সময় রফেদাইন করেন না।  আহলে হাদিস বন্ধুগণ  সাধারণ মুসলমানদের কে প্রভাবিত করার জন্য দাবী করে থাকেন যে,  বারবার হাত উঠানোর হাদিস 425 জন সাহাবী থেকে প্রমাণিত আছে এবং তাদের হিসাব মতে বারবার হাত উঠানোর হাদিস সংখ্যা নাকি 50 জন এবং এ ব্যাপারে যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো একত্র করলে তার সংখ্যা হবে চারশতঃ  তাদের এই দাবি সম্পূর্ণ অমূলক ও ভিত্তিহীন মূলধারার আলেম-ওলামাগণ মনে করেন। 

No comments

Powered by Blogger.