Header Ads

Header ADS

নামাজে হাত বাধার নিয়ম। হাত বেধে নাভির ওপরে ও বুকের ওপরে রাখা সম্পর্কিত হাদিস সমূহ:

হাত নাভির ওপরে রাখা সম্পর্কিত হাদিস


হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রাদিয়াল্লাহু বলেনঃ

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাজে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে নাভির নিচে রাখতে দেখেছি। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাঃ ৩৯৫৯)

শায়েখ আওয়ামা রহমতুল্লাআলাই এই হাদীসের তাহকীকে বলেন, হাদীসটির সনদ সহি।  ইবনে কুতলুবুগা রহ. স্বীয় গ্রন্থ আত তা’রীফ ওয়াল আকবার এ উক্ত হাদীসটি সনদ ও মতন উল্লেখ করে বলেন, সনদটি মজবুত ও শক্তিশালী। আল্লামা আবেদ সিন্ধি রহমাতুল্লাহ আলাই ত্বওয়ালিউল আনওয়ার নামক গ্রন্থে হাদীসটির (সনদ ও মতনসহ) উল্লেখ করে বলেন এই হাদীসের সনদের সকল রাবী প্রহণযোগ্য, একজনও দুর্বল রাবী নেই। আল্লামা ম্রাকানী রহ. নাইলুল আওতার গ্রন্থে প্রথমে হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা: এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা(ডান হাত বাম হাতের উপর রেখেছেন) উল্লেখ করার পর আহমাদ এবং আবূ দাউদের তাফসীলী রিওয়াতআত পর তিনি তার ডান হাত বাম হাতের তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখলেন) উল্লেখ করার পর এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ

তিনি তার ডান হাত বাম হাতের তালুর  পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রেখেছেন। তাবারানী বর্ণনায় বাক্যটি এরূপঃ তিনি নামাজে তার ডান হাত বাম হাতের পিঠের ওপর কব্জির কাছে রেখেছেন (নাইলুল আতোয়ারঃ২/১৮৮)

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ নামাজের সুন্নত হলঃ

তালু তালুর ওপর রেখে নাভির নিচে রাখা। ( মুসনাদে আহমদঃ ১১০, আবু দাউদঃ৭৫৬,  দারাকুতনিঃ ১-২৮৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদিস নংঃ ৩৯৬৬ এই সনদে আবু শাইবা আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক আল ওয়াসেতী রয়েছেন। যদিও তিনি দুর্বল,  কিন্তু প্রথম হাদীসটি এর সমর্থন করেছে,  কাজেই ওই দুর্বলতা দূর হয়ে গিয়েছে।

হযরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু বলেন।

নামাজে হাতের তালু দিয়ে ওপরে নাভির নিচে রাখবেআবু দাউদ-৭৫৮। এতেও উপরোক্ত আব্দুর রহমান রয়েছেন যার দুর্বলতা দূর হয়ে গিয়েছে।

হযরত হাজ্জাজ ইবনে হাসান রহমত উল্লাহ বলেনঃ

আমি আবু মিজলায রহমতউল্লাহকে বলতে শুনেছি, অথবা হাজ্জাজ বলেনঃ আমি আবু মিজলাযকে জিজ্ঞেস করলাম যে, নামাজে কিভাবে হাত বাধ্য তিনি প্রতি উত্তরে বললেনঃ ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর পিঠের ওপর রেখে নাভির নিচে রাখবে। ( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৩৯৬ ৩,ইমাম মারদিনি রহমতুলা আলাহি তার স্বীয় কিতাব  জাওহারুন নাকী তে এই আসার সম্পর্কে রলেন এর সনদ জায়্যিদ-২-৩১।

ইবরাহীম নাখায়ী রহমত উল্লাহ বলেনঃ

নামাজে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে নাভির নিচে বাঁধবে। ( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৩৯৬৯,  একটি হাসান) আল্লামা ইবনুল বঞ্জির রহমতুল্লাআলাই তার আল আওসাদ গ্রন্থে লিখেছেনঃ হযরত ইসহাক রহমাতুল্লাহ আলাই (যিনি ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি এর উস্তাদ) তিনি বলেছেনঃ নাভির নিচে হাত বাধার হাদিস অধিক শক্তিশালী এবং বিনয়ের নিকটতর।  আল আওসাদ ৩-২৪৩ 

বুকের ওপরে হাত রাখা সম্পর্কিত হাদিস সমূহঃ

বুকের উপর হাত বাধা সম্পর্কে কোন সহি হাদিস নেই এক্ষেত্রে যে দলীলসমূহের আশ্রয়ে নেয়া হয় সেগুলোর অবস্থা নিম্নরূপঃ-  হযরত ইবনে হুজুর রাদিয়াল্লাহু এর একটি হাদিস ( সহীহ ইবনে খুযাইমা ১,২৭৩ হা ৪৭৯)এটি সহি হাদিস নয়। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল আছেন।  তিনি সুফিয়ান সাওরী থেকে এটি বর্ণনা করেছেন।মুয়াম্লালকে ইমাম বুখারী ‘মুনকারুল হাদীস’ বলেছেন এবং তিনি এ কথাও বলেছেন আমি যাকে মুনকারুল হাদীস বলবো, তার সূত্রে বর্ণনা করা বৈধ হবে না। ইবনে সাদ আবু আবূ যুর-আ রাযী, আবু হাতেম রাযী ও দারাকুতনী প্রমূখ মুয়াম্লালকে ‘অত্যাধিক ভুলের শিকার’ আখ্যা দিয়েছেন। ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ‘ফাতহুল রারী তে উল্লেখ করেছেনঃ সুফিয়ান হতে মুয়াম্লাল এর  দুর্বলতা আছে । (৫১৭২ নং হাদিস এর অধীনে)  এবং সুফিয়ান সাওরী অন্য গণনার বিপরীত। আর এই হাদিসে মোহাম্মদ ইবনে ইসমাইলের যে ভুল হয়েছে তা ওয়াইল ইবনে হুজর রা হতে বর্ণিত রিয়াদ গুলোর সনদে নজর বুলালেই প্রমাণ হয়।  ওয়াইল ইবনে হুজর রা থেকে হাদীসটি রাওয়াত করেছেনতার ছাত্র কোলাইভ, তার থেকে আসেম, আর আসেম থেকে রিওয়ায়াত করেছেন তার 9 জন ছাত্র যাহা নিম্নরূপঃ

১। বিশর ইবনে মুফাজ্জাল।
২।  জায়েদা।
৩।  আব্দুল্লাহ ইবনে ইদ্রিস।
৪। আবদুল ওয়াহেদ
৫।  সু- বা।
৬।  যুহাইর ইবনে মুয়াবিয়া।
৭। সালাম ইবনে সুলাইম।
৮। খালিদ ইবনে আব্দুল্লাহ।
৯। সুফিয়ান সাওরী।

আসামের এই 9 জন ছাত্রের আট জনি  বুকের অপর উল্লেখ করেননি।  শুধু সুফিয়ান সাওরীর সূত্রে এই শব্দটি পাওয়া যায়।  আর সুফিয়ান সাওরীর দুজন ছাত্র ওই হাদীসটি তার থেকে রেওয়াত করেছে । আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়ালিদ এবং মুয়াম্লাল ইবনে ইসমাইল। এই দুজনের মধ্য থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়ালিদ বুকের উপর শব্দটি উল্লেখ করেননি।  শুধুমাত্র মুয়াম্লাল ইবনে ইসমাইল বুকের উপর উল্লেখ করেছেন। আর খুদ ইমাম সুফিয়ান সাওরীর আমলও  এই হাদিস অনুযায়ী ছিল না। ইমাম নববী লিখেন, ইমাম আবু হানিফ, সুফিয়ান সাওরী, ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ ও আমাদের শাফেয়ীদের মধ্যে আবু ইসহাক মারওয়াযী বলেন, উভয় হাত নাভির নিচে বাধবে। এর দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে,  বুকের উপর শব্দটি মুয়াম্লাল ইবনে ইসমাইল ভুলবশত বৃদ্ধি করেছেন।  তাই এই হাদিস দ্বারা দলিল দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। ( শরহে মুসলিম ১,৭৩, আবূ দাউদ ১,১১২, মুসনাদে আহমাদ: ৪,৩১৮ বাইহাকী: ২,১৩১)

তাউস রহ বলেনঃ  তাউসের বর্ণনায় আবু দাউদ শরীফের ৭৫৯ নং হাদিস। এটি মুরসাল তথা সূত্র বিচ্ছিন্ন,  আর মুরসাল কে তারা প্রমাণ মনে করে না।  তথাপি এতে  সোলায়মান ইবনে মুসা নামের একজন রাবী আছেন।  তার সম্পর্কে বুখারী বলেছেন, তার কাছে অনেক মুনকার বিষয় আছে।  ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি বলেছেন তিনি  মজবুত রাবি নন। দ্রষ্টব্য

আল-কাশিফ। বুকের উপর হাত বাধা সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু থেকে একটি হাদিস বায়হাকী তে আছে ( বায়হাকী হাদিস নং ২১৩৩)  এর সনদে রওহ ইবনুল মুসাআব আছেন। তিনি চরম দুর্বল রাবি।  ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাআলাই তার সম্পর্কে বলেছেনঃ  তিনি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা করতেন।  তার থেকে হাদিস নেওয়া জায়েজ নেই।  ইবনে আদী বলেছেন তার হাদীস সঠিক নয়।  (তাহজিবুত তাহজিব ৪,২৩১)

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু এর হাদিস বুখারী তারিক এ কাবিরে  আছে। আবার এই হাদীসটি একই সনদে ইবনে আবি হাতেম,  আল যারহু ওয়াত  তাদিল নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সেখানে নামাজে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখার কথা আছে বুকের ওপর কথাটি নেই।  তেমনি ভাবে মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা এটি উল্লেখ আছে। সেখানেও বুকের অপর কথাটি নেই।  মুসান্নাফে ইবনে আবী সাইবা হাদিস নং ৩৯৬২। উপরোক্ত, ইমাম বুখারী আত- তারিখোল কাবির হাদীসটিকে সমর্থন করেননি বরং সেটি উল্লেখ করার পর বলেছেনঃ

কুতাইবা রহঃ হুমাঈদ ইবনে আব্দুর রহমানের সূত্রে ইয়াজিদ ইবনে আবুলজাদ থেকে,তিনি আশিম যাহদাড়ির সূত্রে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু এর ছাত্র উকবা থেকে,  তিনি হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।  তিনি তার হাতকব্জির উপর রাখলেন। আততাড়িখুল কাবির-৬৪৩৭।

এ কারণে আল্লামা ইবনে কাসীর রহমাতুল্লাহ আলাই তার স্বীয় তাফসির গ্রন্থে সূরা কাউসার এর ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই হাদীসটি সহি নয়।

হযরত হুলব রা. এর হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ 5/226 হা নং ২২০২৮ আছে। সুফিয়ান থেকে শুধু ইয়াহ ইয়ায়  বুকের উপর হাত বাঁধার কথাটি উল্লেখ করেছেন। মুসনাদে আহমদ ও দারাকুতনিতে ওয়াকি ও আব্দুর রহমান ইবনে মাহাদি রহঃ দুজন সুফিয়ান থেকে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাদের বর্ণনায় বুকের উপর হাত বাঁধার কথা নেই।  তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমাদে সুফিয়ানের সঙ্গী আবুল আহয়াস একই ওস্তাদ সীমাক থেকে এটি বর্ণনা করেছেন। তাদের কারো বর্ণনাতেই বুকের উপর হাত বাঁধার কথা নেই। সুতরাং এটি সায/দুষ্প্রাপ্য হাদিস, যা গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লামা নিমাবি রহমাতুল্লাহ আলাই আসারুল সুনান নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ


আমার মনে হয়, বুকের অপর কথাটি অনুলেখক এর ভুলের কারণ হয়েছে।  সঠিক হল এই হাতটি এই হাতের উপর রেখেছেন, এতে করে এটি পরের কথা সঙ্গেও এর মিল হয়।  কারণ পরে বলা হয়েছেঃ  ইয়াহিয়া ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রেখে দেখিয়েছেন। আর এটি তখন অন্যান্য বর্ণনাকারীদের বর্ণনার সাথে ও সঙ্গতিপূর্ণ হয়-  আশাররুশ শোনান-১০৮এই হিসেবে এ হাদীসটি হানাফিদের সমর্থনসূচক দলিল হয়ে যায়। লক্ষণীয় বিষয় হল লা-মাযহাবীদের একটি দলিল ও সহি নয়।  আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দিনের সঠিক বোঝ দান করুন এবং তদনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন।  এবং এ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি না করে আমরা মহান আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যকে হাসিল করার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ। 

No comments

Powered by Blogger.