জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও ফজিলত
আল্লাহর আইন ও বিধানের জ্ঞান অর্জন করা কি?
বর্তমান যুগের পার্থিব জ্ঞান-বিজ্ঞান যেমন: স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল বিজ্ঞান, অর্থ বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান ভূতত্ত্ব বিজ্ঞান, নক্ষত্র বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব বিজ্ঞান এই সকল বিষয়গুলো জ্ঞান অর্জন করা অর্থাৎ শিক্ষা করা যদি ইসলামের উৎকর্ষ সাধন ও মানব কল্যাণের উদ্দেশ্য হয় তাহলে তা বৈধ, তার কারণ ভালো উদ্দেশ্যে শিক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ যদি মন্দ উদ্দেশ্যে এগুলি শিক্ষা গ্রহণ করে তাহলে তা বৈধ নয়। ফিকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় এগুলোকে হারাম লিগাইরিহি বলা হয়। হারাম লি লিগাইরিহি, নয় এগুলো জায়েজ ও মোবাহ। ভালো উদ্দেশ্যে জ্ঞান অর্জন করলে অনেক বেশি নেকির কাজে তাহা পরিণত হয়।
জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য কি?
এলমে দ্বীন বা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। এবং সেই জ্ঞান অর্জন তা করতে হবে সঠিক উৎস থেকে সঠিক পদ্ধতিতে। এলেম অর্জন না করলে সঠিকভাবে আল্লাহর এবাদত করা যায় না। এলেম না থাকলে মানুষকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করাও যায় না। তাই আল্লাহ সুবহানাতায়ালা দ্বীনি এলেম শিক্ষা ক্বারী ও শিক্ষা দাতা কে সর্বোচ্চ সম্মাননা দান করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে পবিত্র কুরআন শেখে এবং শেখায় সহি বুখারী-৫০২৭।
যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা দেয় সে এর প্রতিদান অনন্তকাল ধরে পেতে থাকে এবং কি তাদের সওয়াব এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তার কাজ এবং কাজের সব ক্ষমতা চিহ্ন বা বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি কাজের সওয়াব বাতিল হয় না সেগুলি হলঃ সদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়, ও এমন সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে- তিরমিজি-১৩৭৬।
এলেম বা জ্ঞান অর্জন করার শর্ত হলোঃ
এলেম বা জ্ঞান অর্জন করতে হবে একমাত্র আল্লাহ সুবাহানাতালা এর সন্তুষ্টির জন্যঃ দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্যে এলেম অর্জন করলে তা মানুষ সম্মান করবে বটে কিন্তু সেই সম্মান প্রকৃত সম্মান না' এবং সেই জ্ঞান নিজের উপকার না করে শাস্তির কারণ হতে পারে। কেননা বিখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেন, যেই এলেম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্ট করা যায় না। কোন লোক যদি দুনিয়ার স্বার্থের জন্য তা শিক্ষা করে, তবে সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধি পাবে না। আবু দাউদ-৩৬৬৪।
এলেম বা জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য যদি হয় মানুষের সঙ্গে ঝগড়া করা, বিভিন্ন ইস্যুতে আলেমদের ওপর বাহাদুরী করা, সেই এলেম মানুষের জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। ইবনে ওমর রাদি আনহু থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নির্বোধের সঙ্গে ঝগড়া করার জন্য অথবা আলেমদের ওপর বাহাদুরি প্রকাশ করার জন্য কিংবা তার নিজের প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য জ্ঞান অর্জন করে সে জাহান্নামী। ইবনে মাজাহ-২৫৩।
জাবির বিন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। তোমরা আলেমদের ওপর বাহাদুরি প্রকাশের জন্য, নির্বোধের সঙ্গে ঝগড়া করার জন্য জনসভার অপরাধ প্রকাশ করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করোনা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে তার জন্য রয়েছে আগুন আর আগুন ইবনে মাজাহ-২৫৪।
No comments
Post a Comment