Header Ads

Header ADS

হিজাব পরার নিয়ম।হিজাব বা পর্দা কেন করতে হবে?

হিজাব পরা কি নারীর স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ? অন্যের লালায়িত দৃষ্টি হতে নিজেকে রক্ষা করে পবিত্রতা ও সৌন্দর্য সমুন্নত রাখা? নারীদের হিজাব পরার মূল উদ্দেশ্য কি? কেনই বা তারা হিজাব পড়বে? হিজাব পরার বিধানই বা কি?

হিজাব হল আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার আদেশ এবং নারী জাতির নিরাপত্তা ও মর্যাদার অন্যতম প্রতীক। ইসলামের নারীদের হিজাব পরার ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। নারীদের ইজ্জত সম্ভ্রম রক্ষায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই হিজাব।

হিজাব বা পর্দার মূল উদ্দেশ্য কি?

নারীদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা এই হিজাবের মাধ্যমেই রক্ষা পায়। রাস্তাঘাটে নারীর চলাফেরা, নারীর পোশাক পরিচ্ছেদ এবং তাদের রূপ সৌন্দর্য প্রকাশের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালা যেসব শর্ত আরোপ করেছেন,  তা শুধু তাকে সংরক্ষণ করার জন্যই নয়। নারীদের চলাফেরা পোশাক পরিচ্ছেদদ কিংবা সৌন্দর্য প্রকাশের কারণে যে সামাজিক বিপর্যয় বা সামাজিক অবক্ষয় হতে পারে,এইসব পথ বন্ধ করার জন্যই হিজাব বা পর্দার বিধান দেওয়া হয়েছে। এটা নারীদের স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ হবে এমনটি নয়বরং হিজাব বা পর্দা নারীকে অন্য পুরুষের কুদৃষ্টির সুবল থেকে রক্ষা করা এবং তার পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের মানকে সংরক্ষিত কড়াই হিজাব বা পর্দার মূল উদ্দেশ্য।

হিজাব বা পর্দার মর্যাদা ও ফজিলত

হিজাব বা পর্দা মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালা এবং তাঁর রাসূলের আদেশ। আর এই আদেশ মেনে চলা প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাব এর ৩৩ নাম্বার আয়াতে বলেনঃ যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়সালা দিয়ে দেন তখন কোন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা করার কোন অধিকার নেই। আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানি করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়। সূরা আল আহযাব-৩৩।

পর্দার বিধান সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার নির্দেশ

১। হে নবী !মুমিন মহিলাদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে,  এবং তাদের লজ্জা স্থান এর হেফাজত করে,  আর তাদের সাজসজ্জা প্রকাশমান স্থান ছাড়া না দেখায়। আর তারা যেন তাদের উড়নার আচল দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে।  সূরা আন নুর-৩১। 

২। নিজেদের গৃহের মধ্যে অবস্থান করো। এবং পূর্বের জাহিলি যুগের মত সাজসজ্জা দেখিয়ে বেরিও না। নামাজ কায়েম করো যাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। আল্লাহ তো চান, তোমাদের নবী পরিবার থেকে ময়লা দূর করতে এবং তোমাদের পুরোপুরি পাক ও পবিত্র করে দিতে। সূরা আল আহযাব-৩৩

৩। তোমরা তার স্ত্রীর কাছে যদি তোমাদের কিছু চাইতে হয় তাহলে পর্দার পেছন থেকে চাও। এটা তোমাদের এবং তোমাদের মনের পবিত্রতার জন্য বেশি উপযোগী। তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া মোটেই জায়েজ নয়। সূরা আল আহযাব-৫৩ ।

৪। হে নবী তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের চাদরের প্রান্ত তাদের ওপর টেনে নেয়। এটি অধিকতর উপযোগী পদ্ধতি, যাতে তাদেরকে চিনে নেওয়া যায় এবং কষ্ট না দেওয়া হয়। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা ক্ষমাশীল ও করুণাময়। সূরা আল আহযাব-৫৯। 

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিরমিজি একটি হাদিসে বলেছেন  নারী হচ্ছে গোপন বস্তু।

হিজাব বা পর্দা নারীর পবিত্রতা ও সৌন্দর্য সমুন্নত রাখে

হিজাব পরিহিতা নারী খোলামেলা নারীদের থেকে অনেক বেশি নিরাপদ। এতে নারীরা অন্যের দ্বারা হয়রানির স্বীকার থেকেও মুক্তি পায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বিষয়টি আমাদের এভাবে জানিয়েছেন যে, “হে নবী! তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিন নারীদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের চাদরের প্রান্ত তাদের অপর টেনে নেয়। এটি অধিকতর উপযোগী পদ্ধতি, যাতে তাদেরকে চিনে নেওয়া যায় এবং কষ্ট না দেওয়া হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। সূরা আহযাব-৫৯ “চিনে নেওয়া যায়” এর অর্থ হচ্ছে, তাদেরকে এই ধরনের অনারম্বর লজ্জা নিবারণকারী পোশাক সজ্জিত দেখে প্রত্যেক প্রত্যক্ষকারী জানবে তারা অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের পুতপবিত্র মেয়ে, এমন ভবঘুরে অসতী ও পেশাদার মেয়ে নয়, কোন অসত্য চারি মানুষ যার কাছে নিজের কামনা পূর্ণ করার আশা করতে পারে। “ না কষ্ট দেওয়া হয়” এর অর্থ হচ্ছে এই যে তাদেরকে যেন উকত্ত্ব জ্বালাতন না করা হয়। এখানে কিছুক্ষণ নিরব থেকে একবার কথাটি অনুধাবন করার চেষ্টা করুন যে,পবিত্র কোরআনে এই হুকুম এই হুকুমের যে উদ্দেশ্য আল্লাহ নিজে বর্ণনা করেছেন তা ইসলামী সমাজ বিধানে কোন ধরনের প্রাণশক্তির প্রকাশ ঘটাচ্ছে।

হিজাব বা পর্দার নির্মলতা

হে ঈমানদারগণ! নবী গৃহে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করো না, খাবার সময়ের অপেক্ষায় থেকো না। হা যদি তোমাদের খাবার জন্য ডাকা হয়, তাহলে অবশ্যই এসো কিন্তু খাবার খাওয়া হয়ে গেলে চলে যাও,  কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়োনা।  তোমাদের এসব আচরণ নবীকে কষ্ট দেয় কিন্তু তিনি লজ্জায় কিছু বলেন না এবং  আল্লাহ হক কথা বলতে লজ্জা করেন না। নবীর স্ত্রীদের কাছে যদি তোমাদের কিছু চাইতে হয় তাহলে পর্দার পেছন থেকে চাও। এটা তোমাদের এবং তাদের মনের পবিত্রতার জন্য বেশি উপযোগী। তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া মোটেই জায়েজ নয়  এবং তারপরে তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করাও জায়েজ নয়, এটা আল্লাহর দৃষ্টিতে মস্ত বড় গুনাহ।  তোমরা কোন কথা প্রকাশ বা গোপন করো আল্লাহ সবকিছুই জানেন।  সূরা আহযাব- ৫৩-৫৪

হে নবী-র স্ত্রীগণ!  তোমরা সাধারন নারীদের মত নও।  যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করে থাকো, তাহলে মিহি সুরে কথা বলোনা,  যাতে মনের গলদে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি প্রাণবন্ত হয়ে পড়ে, বরং পরিষ্কার সুজা ও স্বাভাবিকভাবে কথা বল। সূরা আল আহজাব-৩২

এই আয়াতগুলোতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে।  কিন্তু এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে সমস্ত মুসলিম পরিবারের এই সংশোধনী গুলি প্রবর্তন করা।  নবীর পবিত্র স্ত্রীগণ সম্বোধন করার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে,  যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গৃহ থেকে এই পবিত্র জীবন ধারার সূচনা হবে তখন অন্যান্য সকল মুসলিম গৃহের মহিলারা আপনা আপনি এর অনুসরণ করতে থাকবে।  কারণ এই গ্রহটি তাদের জন্য আদর্শ ছিল।  এই আয়াত গুলোতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে কেবলমাত্র এর ভিত্তিতে কেউ কেউ দাবি করে বসেছেন যে,  এই বিধানগুলো কেবলমাত্র তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট কিন্তু সামনের দিকে এই আয়াতগুলো যা কিছু বলা হয়েছে তা পাঠ করে দেখুন। যে এই বিধানগুলো সমস্ত নারীদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।

প্রয়োজন হলে কোন পুরুষের সাথে কথা বলতে বাধা নেই কিন্তু এ সময় নারীর কথা বলার ভঙ্গি ও ধরন এমন হতে হবে যাতে আলাপ কারী পুরুষের মনে কখনোই এই ধরনের কোন চিন্তার উদয় না হয় যে, এই নারীর ব্যাপারে অন্য কিছু আশা করা যেতে পারে।  তার বলার ভঙ্গিতে কোন নমনীয়তা থাকবে না।  তার কথায় কোন মন মাতানো বাপ থাকবে না।  সে সজ্ঞানে তার সুরে মাদূর্য সৃষ্টি করবে না।  যা শ্রবণকারী পুরুষের আবেগকে উদ্বেলিত করে তাকে সামনে পা বাড়াবার প্ররোচনা দেবে ও সাহস যুগাবে। এই ধরনের কথাবার্তা সম্পর্কে আল্লাহ পরিষ্কার বলেন, এমন কোন নারীর পক্ষে এটা শোভনীয় নয়, এটা দুশ্চরিত্রা ও বেহায়া নারীদের কথা বলার ধরন মুমিন ও মুত্তাকী নারীদের নয়।

এর সাথে সূরা নুনের এই আয়াতটি সামনে রাখা অতীব জরুরী এখানে মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেন  “তারা যেন জমিনের উপর এমন ভাবে পদ-গাত করে না চলে, যার ফলে যে সৌন্দর্য তারা লুকিয়ে রেখেছে তা লোকদের দৃষ্টিগোচর হয়।

এ থেকে মনে হয় বিশ্ব জাহানের রবের পরিষ্কার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে,  নারীরা যেন অযথা নিজেদের সুর ও অলংকারের ধনী অন্য পুরুষদেরকে না শোনায় এবং যদি প্রয়োজনে অপরিচিতদের সাথে কথা বলতে হয়, তাহলে পুরনো সতর্কতা সহকারে বলতে হবে। এজন্যই নারীদের আযান দেওয়া নিষেধ।  তাছাড়া জামাতের নামাজে যদি কোন নারী হাজির থাকে এবং ইমাম ভুল করেন তাহলে পুরুষদের মতো তার সুবাহানাল্লাহ বলার অনুমতি নেই,  তারা কেবল হাতের ওপর হাত মেরে আওয়াজ সৃষ্টি করতে হবে,  যাতে ইমাম সতর্ক হয়ে যান।  

হিজাব বা পর্দা হলো ঈমান

মহান আল্লাহ সুবহানুতায়ালা শুধুমাত্র ঈমানদার নারীদের কে উদ্দেশ্য করেই পর্দা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।  তিনি ঈমানদার ছাড়া অন্য কাউকে পর্দার আদেশ করেননি।  এজন্যই মহান আল্লাহ সুবাহানাতালা এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন যে,  হে রাসুল!  আপনি মুমিন নারীদের বলুন…….


একবার বনি তামিম গুত্রের কিছু নারী উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে আগমন করেন,  সেই সময়ে তাদের পরনে ছিল পাতলা পোশাক।  তিনি বললেন,  তোমরা যদি মুমেনা হয়ে থাক, তবে এটা ঈমানদার নারীর পোশাক নয়।  আর যদি ঈমানদার না হয়ে থাকো,  তবে এই পোশাক দ্বারা উপকৃত হতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.