রোজা ভঙ্গের কারণ
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ হচ্ছে রোজা, নামাজের পরেই এই রোজার স্থান। মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালা মুসলমানদের ওপর রমজানের রোজাকে ফরজ করেছেন। আবহমান কাল থেকে রোজা কে নামাজের মত সকল নবীর শরীয়তেই ফরজ ছিল, যা এখনো বিদ্যমান। মহান আল্লাহ তায়ালা রোজা এজন্যই ফরজ করেছেন যে, যাতে ঈমানদারগণ মুত্তাকী হতে পারে। এই গুরুত্বপূর্ণ এবাদতটি, অর্থাৎ রোজা ভঙ্গের কারণগুলি জানবো ইনশাআল্লাহ।
রোজা ভঙ্গের কারণ এবং সেই সাথে কাজা ওয়াজিব হওয়া
১। কানে বা নাকে ওষুধ দিলে।
২। ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে বা অল্প বমি আসার পর তা গিলে ফেললে।
৩। কুলি করার সময় অনিইচ্ছাবসত কণ্ঠনালীতে পানি চলে গেলে।
৪। স্ত্রী বা কোন নারীকে শুধু স্পর্শ প্রবৃত্তি করার কারণেই বীর্যপাত হয়ে গেলে।
৫। এমন কোন জিনিস খেলে যা সাধারনত খাওয়া হয় না। যেমন কাঠ,লোহা, কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা ইত্যাদি।
৬। বিড়ি সিগারেট বা হুক্কা সেবন করলে রোজা নষ্ট হয়ে যায়।
৭। আগর বাতি প্রভৃতির দোয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাকে বা হলকে পৌঁছালে।
৮। ভুলে পাল আহার করার পর রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে তালহার করলে। ৯। রাত আছে মনে করে সুবহ সাদেকের পরে সেহরি খেলে।
১০। ইফতারির সময় হয়নি, দিন হয়ে গেছে অথচ সময় হয়ে গেছে এটা মনে করে ইফতারি করলে।
১১। দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে তা যদি থুতুড়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং কন্ঠনালীর নিচে চলে যায়।
১২। দুপুরের পরে রোজার নিয়ত করলে।
১৩। কেউ জোরপূর্বক রোজাদারের মুখে কোন কিছু দিলে এবং তা কণ্ঠনালীতে পৌঁছে গেলে।
১৪। দাতে কোন খাদ্য টুকরা আটকে ছিল এবং সুবহে সাদেকের পর তা যদি পেতে চলে যায় তবে সেই টুকরা চুলা বুটের চেয়ে ছোট হলে রোজা ভেঙ্গে যায় না, তবে এরূপ করা মাকরূ। কিন্তু মুখ থেকে বের করার পর গিলে ফেললে তা যতই ছোট হোক না কেন রোজা কাজা করতে হবে।
১৫। হস্তমৈথুন করলে যদি বীর্যপাত হয়।
১৬। পেশাবের রাস্তায় বা স্ত্রীর যোনিতে কোন ওষুধ প্রবেশ করালে।
১৭। পানি বা তেল দ্বারা ভিজা আঙ্গুল যৌনিতে বা পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ করালে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
১৮। শুকনো আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে পুরোটা বা কিছুটা বের করে আবার প্রবেশ করালে। আর যদি শুকনো আঙ্গুল একবার প্রবেশ করিয়ে একবারে পুরোটা বের করে নেয় আবার প্রবেশ না করায়, তাহলে রোজার অসুবিধা হয় না।
১৯। মুখে পানি রেখে ঘুমিয়ে গেলে এবং এ অবস্থায় সুবহে সাদেক হয়ে গেলে।
২০। নস্যি গ্রহণ করলে বা কানে তেল ঢাললে।
২১। কেউ রোজার নিয়ত যদি না করে তাহলে তার জন্য রোজা কাজা করা ওয়াজিব হয়।
২২। স্ত্রী বেহুঁশ থাকা অবস্থায় কিংবা বে খবর ঘুমন্ত অবস্থায় তার সাথে সহবাস করা হলে ওই স্ত্রীর অপর শুধু কাজা ওয়াজিব হবে।
২৩। রমজান ব্যতীত অন্য নফল রোজা ভঙ্গ করলে শুধু কাজা ওয়াজিব হয়।
২৪। কোন রোজাদার ব্যক্তি এক দেশ থেকে রোজা শুরু করার পর অন্য দেশে চলে গেলে সেখানে যদি নিজের দেশের তুলনায় আগে ঈদ হয়ে যায় তাহলে নিজের দেশের হিসেবে যে কয়টা রোজা বাদ গিয়েছে তা কাজা করে নিতে হবে। আর যদি সেখানে গিয়ে রোজা দু,এক টা বেড়ে যায় তাহলে তা রাখতে হবে।
রোজা ভঙ্গের কারণ এবং কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হওয়া।
১। রোজার নিয়ত রাতে করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে।
২। রোজার নিয়ত করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী সম্ভোগ করলে। স্ত্রীর ওপর কাজা কাফফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে। স্ত্রীর যৌনির মধ্যে পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ প্রবেশ করালেই কাজা ও কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে, তাই বীর্যপাত হোক বা না হোক।
৩। রোজার নিয়ত করার পর পাপ হওয়া সত্বেও যদি পুরুষ তার পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ করায় এবং অগ্রভাগ ভিতরে প্রবেশ করে এমত অবস্থায় বীর্যপাত হোক বা না হোক তাহলে পুরুষ স্ত্রী উভয়ের ওপর কাজা এবং কাফফারা দুটোই ওয়াজিব হবে।
৪। রোজা অবস্থায় কোন বৈধ কাজ করলো যেমন স্ত্রী চুম্বন দিল কিংবা মাথায় তেল দিল তা সত্ত্বেও সে মনে করল যে, রোজা নষ্ট হয়ে গিয়েছে ভেবেখাওয়া দাওয়া করলো তাহলে তার জন্য কাজা ও কাফফারা দুটোই ওয়াজিব হবে।
স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা নষ্ট হয়?
স্বপ্নদোষ হলে রোজা নষ্ট হয় না। কারো যদি সেহরি খাওয়ার পূর্বে স্বপ্নদোষ হয় যদি গোসল করার সময় থাকে তাহলে গোসল করে নেবে আর যদি সময় না থাকে তাহলে গোসল না করেও সেহরি খেতে পারবে। তবে ফজরের নামাজ আদায় করতে গেলে তাকে অবশ্যই গোসল করে নিতে হবে। আর যদি সেহরি খাওয়ার পরে স্বপ্নদোষ হয় তাহলেও রোজা নষ্ট হবে না। তবে যদি কোন নারীকে স্পর্শ করার কারণে বীর্যপাত ঘটে তাহলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
No comments
Post a Comment