যাকাতের হিসাব। বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
যাকাত শব্দের অর্থ কি
যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, পবিত্রতা অর্থেও যাকাত শব্দটি ব্যবহার করা হয়। পারিভাষিক অর্থ ইসলামের শরীয়তের পরিভাষায় নির্ধারিত নিয়মে সম্পদের নির্ধারিত অংশ পরিশোধ করাকে যাকাত বলে।
যাকাত কাকে বলে
সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর নারীর কাছে যদি নিছাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর মালিকানায় থাকে তাহলে এক বছর পূর্ণ হলে তাকে সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিব মিসকিনদের দিয়ে দেওয়ার হয় তাকে যাকাত বলে। যাকাত দেওয়া ফরজ।
যাকাত প্রদানের খাত কয়টি
যাকাত দেওয়ার নিয়মঃ ১। ফকির অর্থাৎ যাদের নিকট সন্তান-সন্ততির প্রয়োজন সমাধা করার মত অর্থ সম্পদ নেই অথবা যাদের নিকট যাকাতের ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই এদেরকে যাকাত দিতে হবে।
২। ফকির-মিসকিন অর্থাৎ যারা উপার্জন করতে পারে না অথবা যাদের জীবিকা অর্জনের ক্ষমতা নেই এদের যাকাত দেওয়া যায়।
৬। মুসাফির ব্যক্তি সে বাড়িতে সম্পদ শালী কিন্তু সফরকালীন সময়ে তার কোন হাতে কোন টাকা পয়সা নেই এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে।
৪। তারপর যাকাতের অন্যান্য প্রকার হকদারগণ।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
আপনার কাছে যদি নগদ টাকা এক বছর আপনার মালিকানায় গুচ্ছিত থাকে তাহলে বর্তমানে আপনাকে স্বর্ণের হিসাবে ৬ লাখ টাকা থাকলে যাকাত প্রদান করতে হবে এবং রুপার হিসাবে আপনার কাছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা থাকলে যাকাত প্রদান করতে হবে।
যাকাত দেওয়ার নিয়ম
বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে যাকাত আদায় করতে হবে। বিনা কারণে বিলম্ব করলে পাপ হবে। যাকাত আদায় করার সময় নিয়ত করতে হবে যে, এই সম্পদ আল্লাহর ওয়াস্তে যাকাত হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে, তাছাড়া যাকাত আদায় হবে না। নেসাবের মালিক হওয়ার পর বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই অর্থাৎ যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পূর্বে অগ্রিম প্রদান করা যায়। যাকাত প্রদানের সময় গ্রহণকারীকে এ কথা জানানোর প্রয়োজন নেই যে, এটা যাকাতের টাকা। আপন জনকে যাকাত দিলে তাকে এ কথা না বলাই শ্রেয়, কেননা বললে তার খারাপ লাগতে পারে। যে পরিমাণ টাকা থাকলে কারোর উপর যাকাত ফরজ হয় এত পরিমান যাকাতের টাকা একজনকে দেওয়া মাকরূহ। তবে ঋণ ব্যক্তির ঋণমুক্তির জন্য বা অধিক সন্তান-সন্ততি থাকলে এ পরিমান দিলে ক্ষতি নেই। যাকাত দেওয়ার নিয়তে কোন টাকা পৃথক করে রাখলে পরে দেওয়ার সময় যাকাতের নিয়তের কথা মনে না আসলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। যাকে যাকাত দিবে অন্তত এত পরিমান দিবে যেন ওই দিনের খরচের জন্য সে আর অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়। কমপক্ষে এত পরিমান দেওয়া মুস্তাহাব, এর চেয়েও কম দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। কারও নিকট টাকা পাওনা থাকলে যাকাতের নিয়তে সেই পাওনা মাফ করে দিলে যাকাত আদায় হবে না বরং তার নিকট যাকাতের টাকা দিয়ে পরে তার নিকট থেকে ঋণ পরিশোধের টাকা নিয়ে নিলে যাকাত আদায় হবে। ঋণ ও যাকাত উসল হবে। যাকাতের টাকা নিজের হাতে গরিবদেরকে না দিয়ে অন্য কাউকে উকিল বানিয়ে তার দ্বারা দিলেও যাকাত আদায় হবে। যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর কেউ নিজের সমস্ত মাল দান করে দিলে তার যাকাত মাফ হয়ে যায়। যাকাত দাতার অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না। যাকাত দাতা কাউকে পুরষ্কারে নামে কিছু দিলে আর অন্তরে নিয়ত রাখলো যে যাকাত হতে দিলাম তবুও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। মুখে যাকাত কথাটি বলার আবশ্যকতা নেই।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
যে অর্থ সম্পদে যাকাত আসে সেই অর্থ সম্পদের ৪০ ভাগের একভাগ যাকাত আদায় করা ফরজ। মূল্যের আকারে নগদ টাকা দ্বারা বা তা দ্বারা কোন আসবাবপত্র ক্রয় করে তা যাকাত দেওয়া যায়।
ক) সোনা রুপার মধ্যে যদি ব্রোঞ্জ, রাং, দস্তা, তামা ইত্যাদি কোন কিছুর মিশ্রণ থাকে আর সেই মিশ্রণ সোনা রুপার চেয়ে কম হয় তাহলে পুরোটাকেই সোনা রুপা ধরে যাকাতের হিসাব করা হবে মিশ্রিত দব্যের কোন ধর্তব্য হবে না। আর যদি মিশ্রিত দব্য সোনা রুপার চেয়ে অধিক হয় তাহলে সেটাকে আর শোনার উপায় ধরা হবে না, বরং ওই মিশ্রিত দব্যই ধরা হবে।
খ) যাকাত হিসেব করার সময় অর্থাৎ ওয়াজিব হওয়ার সময় সোনা রুপা ব্যবসায়িক পণ্য ইত্যাদির মূল্য ধরতে হবে তখনকার বাজারদর হিসেবে এবং সোনার উপায় ইত্যাদি যে স্থানে রয়েছে সে স্থানের দাম ধরতে হবে।
গ) যাকাত দাতার যে পরিমাণ ঋণ আছে সেই পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে বাকিটা যাকাত হিসেব দরবে। ঋণ পরিমান অর্থ বাদ দিয়ে যদি যাকাতের নিসাব পূর্ণ না হয় তাহলে যাকাত ফরজ হবেনা।
কোন খাতে যাকাত দেওয়া যায় না
নিচের লোকদেরকে বা নিম্নলিখিত খাতে যাকাত দেওয়া যায় না, দিলে যাকাত আদায় হবে না।
২। যারা সায়েদ অর্থাৎ হাছানী, হোসাইনি, আলাবী,জাফরী ইত্যাদি।
৩। যাকাত দাতার পিতা মাতা, দাদা-দাদি, পরদাদা-পরদাদী, নানা-নানি, পরনানা, পরনানী, ইত্যাদি উপরে যারা আছে।
৪। যাকাত দাতার ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি, পুতা, পৌত্রী, ইত্যাদি নিচের দিকে যত আছে, এদেরকে যাকাত প্রদান করা যাবে না।
৪। যাকাত দাতার স্বামী বা স্ত্রী।
৫। অমুসলিমকে যাকাত দেওয়া যায় না।
৭। যার ওপর যাকাত ফরজ হয় এরূপ মালদার লোকদের নাবালেক সন্তান।
৮। মসজিদ মাদ্রাসা রাস্তাঘাট বা স্কুল কলেজ হাসপাতাল এসব কিছু নির্মাণ কাজের জন্য যাকাতের টাকা খরচ করা যাবে না।
৯। কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার দাফন কাফনের জন্য বা মৃত ব্যক্তির ঋণ ইত্যাদি পরিশোধের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায় না।
১০। রাস্তাঘাট কোন ইত্যাদি নির্মাণ ও স্থাপন কার্যে যেখানে নির্দিষ্ট কাউকে মালিক বানানো হয় না সেখানে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায় না।
1 comment
Thanks, jakat somporke sotik darona pelam
Post a Comment