ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা
ইসলামে নারীর অধিকার
ইতিহাস সাক্ষী ইসলাম ছাড়া আর কোন ধর্ম সমাজ ও নারীকে পরিপূর্ণ মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নারী অধিকার আদায়ের জন্য আজ দেশে দেশে আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু ইসলাম নারীর প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছে তখন, যখন নারীকে মানুষ বলে গণ্য করা হতো না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ নারীদের অধিকার নিয়ে তাদের নামেই আলাদা সূরা অবতীর্ণ করেই ক্ষান্ত হননি, কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় নারীর ন্যায় সঙ্গত অধিকার নিয়ে বহু আয়াত নাজিল করেছেন। নারী-পুরুষের ন্যায় সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন।
নারীর অধিকার সম্পর্কে আল্লাহর বাণী
নারী ও পুরুষকে মর্যাদা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন। তারা তোমাদের আবরণ আর তোমরা তাদের আবরণ- সূরা আল বাকারা-১৮৭।
“ নারীদের জন্য ঠিক তেমনি ন্যায় সঙ্গত অধিকার আছে যেমন পুরুষদের অধিকার আছে তাদের ওপর কবে পুরুষদের তাদের ওপর একটি মর্যাদা আছে আর সবার উপরে আছেন মহান আল্লাহর সর্বাধিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী বিচক্ষণ ও জ্ঞানী। সূরা আল বাকারা-২২৮।
ইসলাম প্রচারে নারীর ভূমিকা
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজ নারী-পুরুষ সবার জন্যই ফরজ রাসূলের যুগের নারীগণ এক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। তারা সর্বশক্তি দিয়ে দ্বীনের প্রচার করেছেন, যুদ্ধ তৎপরতায় অংশগ্রহণ করেছে। প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীর মর্যাদা লাভ করেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাণীর মাধ্যমে নারীকে দিয়েছেন অনন্য মর্যাদা।
হাদিসের মাধ্যমে নারীর অধিকার
মহান আল্লাহ ও আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর মায়ের মর্যাদা নির্দিষ্ট করেছে ইসলাম। নারীর সম্ভ্রম ও সতীত্ব রক্ষা করা, নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে ইসলামের চাইতে কার্যকর ব্যবস্থা আর কোথাও নেই। কিন্তু অজ্ঞাতা ও অসচেতনতার কারণে আমাদের সমাজের নারীরা ইসলাম প্রদত্ত অধিকার থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। শুধু বঞ্চিতই নয়, আমাদের দেশে নারীরা আজ ব্যাপকভাবে নির্যাতনের স্বীকার। বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত ও ভিত্তিহীন স্তরে। এমনকি উচ্চবিত্ত শিক্ষিত সমাজেও নারীরা বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার। এর প্রধান কারণ ইসলাম প্রদত্ত নাড়ীর অধিকার দেওয়ার ব্যাপারে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বত্রভাবে সচেতন ও সচেষ্ট নয়।
যৌতুক নারীদের অধিকার কে হরণ করেছে
যৌতুক সমাজের জন্য এক বিরাট অভিশাপ। নারে ভাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর শিকার হয়ে থাকে। এর কারণ ইসলামী বিধান সম্পর্কে জানা ও মানার ব্যাপারে অজ্ঞাতা ও অবহেলা। যৌতুক দেওয়া-নেওয়া ইসলামে হারাম। এই হারাম কাজ থেকে বিরত রাখার জন্যই আমাদের সমাজের সর্বোত্তই যৌতুকবিহীন বিয়ের ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
নারী অধিকারের নামে নারীকে পান্দে পরিণত করেছে একটি মহল
নারী অধিকারের নামে নারীকে পণ্য পরিণত করা, পুরুষের প্রতিপক্ষ করে তোলা বা এক ঘরে ও অসহায় করে তোলা ইসলামের কাম্য নয়। এজন্যই অর্থনৈতিকভাবে নারীকে সাবলীল করে তোলার জন্য ইসলামের যে উদারনীতি রয়েছে তা বাস্তবায়ন অবশ্যই প্রয়োজন। নারীর নিজস্ব সম্পদ, মোহরানা বাবদ আয়, পিতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে তার অধিকার নিশ্চিত করা গেলে নারীর সামাজিক মর্যাদাকে আমরা সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবো ইনশাল্লাহ।
আরো জানুন > নারীর ফরজ গোসলের নিয়ম
মোট কথা হলো,
কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত নারীর মর্যাদা ও সমুদয় অধিকার প্রতিষ্ঠা সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে সর্বত্রভাবে কাজে লাগাতে হবে। পাশ্চাত্য সমাজে ভোগ-বাদ নারীকে আজ পণ্যে পরিণত করেছে। সেখানে পরিবার প্রথা ভেঙে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। তথাকথিত প্রগতিশীলতা নারীকে পরিণত করেছে ভোগের সামগ্রীতে। নারীর সামাজিক নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদ বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। নারীরা হয়ে পড়েছে অসহায় ও এক ঘরে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে পুরুষের পাশাপাশি নারী কেউ আজ এগিয়ে আসতে হবে। ইসলাম প্রদত্ত নারী অধিকার আদায়ের দাবিতে তাদের সংঘবদ্ধ করতে হবে। নারী ও পুরুষ পরস্পরের শত্রু নয়। বরং পরিপূরক সহায়ক, এই অনুভূতি সকলের মধ্যে জাগৃত করা এবং নারী পুরুষের মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একটি কল্যাণময় সমাজ ও সভ্যতা গড়ে তোলা সম্ভব বলে সুদৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে।
No comments
Post a Comment