মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া
জন্ম নিলেই মৃত্যুবরণ করতে হয়। জন্ম নাই তো মৃত্যু নাই। প্রতিটি মানুষই মানুষই এই পৃথিবীতে নির্ধারিত সময় অতিবাহিত করার পর, দুনিয়াতে বিদায় জানাই। মৃত্যুর সাথে সাথেই, তার নেকির দরজা বন্ধ হয়ে যায়। নির্ধারিত কিছু কাজের মাধ্যমে তার নেকির দরজা খোলা থাকে। তার মধ্যে একটি হলো মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া। আমরা এখানে জানার চেষ্টা করব মৃত ব্যক্তির জন্য কিভাবে দোয়া করতে হয়, মৃত ব্যক্তির জন্য শোক বার্তা, মৃত ব্যক্তির জন্য সন্তানের করণীয়, মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন খতম এবং মৃত ব্যক্তির জন্য মিলাদ পড়া কি জায়েজ।
মহান আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আল ইমরানের ১৮৫ আয়াতে বলেন প্রত্যেক ব্যক্তিকে মরতে হবে এবং তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন নিজেদের পূর্ণ প্রতিদান লাভ করবে। একমাত্র সেই ব্যক্তি সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর এ দুনিয়াটা তো নিঃশ্বক একটা বাহ্যিক প্রতারণার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়।
সূরা আন নিসার ৭৮ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন যে, তোমরা যেথায় থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই, যদি তোমরা হাই সিকিউরিটি সম্বলিত দুর্গের মধ্যেও থাকো।
মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া
আমাদের মৃত ব্যক্তির জন্য অবশ্যই দোয়া করা উচিত কিভাবে আমরা মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করব তা পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ সুবহানা তায়ালা উল্লেখ করেছেন।
উচ্চারণঃ রাব্বা না গো ফিরলানা অলি ইখও নিনালাজিনা সাবাকুনা বিল ইয়ামানে অলা তাজআল ফিকুলুবিনা গিল্লাল লাজিনা আমানু রাব্বানা ইন্নাকা রাউফুর রহিম।
অর্থঃ হে আমাদের রব, আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইকে মাফ করে দাও যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে। আর আমাদের মনে ঈমানদারদের জন্য কোন হিংসা-বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের রব, তুমি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
মৃত ব্যক্তির জন্য শোক বার্তা
আধুনিক মুসলিম সমাজে শোক প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু নতুন নিয়মের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যা পালনে প্রাকৃতিক পক্ষে সুখ বার্তা প্রকাশ হয়। কিন্তু তাতে মৃত ব্যক্তির কোন উপকার হয় এমনটা বলা যায় না। যেমন মৃত ব্যক্তির জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন, কালো বাস ধারন, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, সমাধিতে ফুল দেওয়া, এবং মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন। সুখ প্রকাশের এই রীতিগুলোর প্রমাণ ইসলামে নেই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন। যে ব্যক্তি কারো মৃত্যুতে নিজ পরিধি ও কাপড় ছিড়ে ফেলবে, সে নিজের আঘাত করবে, মূর্খ যুগের মত মৃতকে ডাকবে, সে আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি সুখে মাথা ন্যাড়া করবে, এবং উচ্চ আওয়াজে কাঁদবে সে আমার দলভুক্ত নয়। সুনানে আবু দাউদ।
মৃত ব্যক্তির জন্য সন্তানের করণীয়
যার মা-বাবা পৃথিবী থেকে চলে গেছে তারাই একমাত্র বুঝতে পারে সেই মা-বাবা হারানোর বেদনা। মা হচ্ছে ছেলে সন্তানের জন্য আপন ঠিকানা এবং ভাবা হচ্ছে বট বৃক্ষ। একদিন মা-বাবাকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতেই হবে। তাই পৃথিবী থেকে মা-বাবা চলে যাওয়ার পর সন্তানের ওপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ অবশ্যই পালন করতে হয়। মৃত ব্যক্তির জন্য সন্তানের করণীয়ঃ
১। মাতা পিতার ঋণ ও ওসিয়াত শুরু করা ঋণ পরিশোধ না করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। তাই মা-বাবা যে ঋণ করে যাবে সেই ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব সন্তানের ওপর। এবং বাবা যদি কোন অসিয়ত করে যায় তাহলে সেই ওসিয়ত সন্তানদের পূরণ করতে হবে।
২। মাতা পিতার জন্য মাগফিরাত কামনা করা। মাগফিরাত হল মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
৩। প্রতিনিয়ত মৃত ব্যক্তিকে সম্মান দেওয়া এবং তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করা এজন্য কোন নির্ধারিত তারিখ ও দিন নেই যে কোন সময় যেকোনো দিনে দোয়া করা যেতে পারে, এজন্যই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে শিখিয়েছেন। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।
৪। কবর জিয়ারত করা। পিতা-মাতা ইন্তেকাল করলে মাঝেমধ্যে কবর জিয়ারত করা সন্তানদের কর্তব্য বিশেষ করে জুমার দিন কবর জিয়ারত করা সম্পর্কে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
আরো জানুন > কবর জিয়ারতের নিয়ম
৫। মৃত পিতা-মাতার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। মৃত পিতা-মাতার জন্য দান সদকা করা সন্তানের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।
মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন খতম
মৃত ব্যক্তির জন্য টাকার বিনিময়ে লোক ভাড়া করে কোরআন খতম করালে সওয়াব হবে না। কারণ এটি মূলত বেদাতি আমল। যে ব্যক্তি কুরআন খতম করেছে সেও সওয়াব পাবে না কারণ সে টাকার বিনিময়ে কোরআন খতম করেছে আল্লাহকে সন্তুষ্ট অর্জনের জন্য তা করেনি।
মৃত ব্যক্তির জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম যে দোয়া করেছেন
ইন্নালিল্লাহি মা আখাজা ওলাহু মাআতা ওয়াক্কুল্লু সাইন ইনদাহু বিয়া জালিম মোছাম্মা।
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ যা নিয়েছেন তা তারই এবং যা দিয়েছেন তাও তার। সব জিনিস তার কাছে নির্ধারিত সময়ে বাধা। অতএব তুমি ধৈর্য ধরো এবং সবের আশা করো।
No comments
Post a Comment