ঈমান ও আকিদা কি।ঈমান কাকে বলে
ঈমান কাকে বলে
এক কথায় উত্তর দেওয়া কখনো সম্ভব না। ইসলামে এর অর্থ ব্যাপক, ইমান এবং আকিদা সম্পর্কে বুঝতে হলে আমাদেরকে শুরু করতে হবে কালেমা থেকে। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার রাসূল। এই কালেমাটি ছোট হলেও এর ভাব অর্থ অনেক ব্যাপক। এই কালিমাটিকে আমরা দুটি অংশে বিভক্ত করতে পারি।
প্রথমটি হলঃ এই ঈমান ও আকিদার প্রথম অংশে অর্থাৎ আল্লাহ সুবাহানাতালা একমাত্র ইলাহ হওয়া, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কেহ ইলাহ না হওয়ার অর্থ এই যে, আকাশ মন্ডল ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে এবং পৃথিবীর বাইরে যা কিছু আছে সে সব কিছুরই সৃষ্টিকর্তা, প্রতিপালক, একমাত্র মালিক এবং প্রাকৃতিক ও বিধিগত সার্বভৌম সত্তা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ সুবহানাতায়ালা। এইসবের কোন একটি দিক দিয়েও আল্লাহর সহিত কোন শরীক নেই। এই মৌলিক সত্য কথাটি যদি কেউ জানিয়া ও মানিয়া না নেয় তাহলে তার ঈমান থাকবে না। এই বিষয়গুলোকে বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে বলতে হয়ঃ
ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্য
ক) মানুষ আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত আর কাহাকেই নিজের পৃষ্ঠপোষক কার্য সম্প্রদানকারী, প্রয়োজন পূরণকারী, বিপদ থেকে উদ্ধারকারী, এবং পৃথিবীর সমস্ত মাখলুকাতের ফরিয়াদ শ্রবণ ও গ্রহণকারী, এবং সমস্ত দিক দিয়ে সাহায্য দাতা ও রক্ষাকর্তা মনে করিবে না। কেননা তিনি ব্যতীত আর কারো নিকট কোন ক্ষমতা নেই।
খ) মহান আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত অন্য কাহাকেও কল্যাণকারী মনে করিবে না, কাহারও সম্পর্কে অন্তরের মধ্যে ভীতি অনুভব করিবে না, আল্লাহ ব্যতীত কারো উপর নির্ভর করিবে না, কাহার প্রতি এমন কোন আশা পোষণ করিবেনা এবং এই কথা বিশ্বাস করিবে না যে, আল্লাহ সুবহানাতায়ালা অনুমোদন ছাড়া কারো উপর কোন বিপদ মুসিবত আসতে পারে। কেননা সকল প্রকার ক্ষমতা ও একটি, আর মহান আল্লাহ তায়ালার হাতেই।
গ) মহান আল্লাহ ব্যতীত আর কারো নিকট দুয়া বা প্রার্থনা করিবে না, কাহার নিকট আশ্রয় তালাশ করা যাবে না, কাহাকেও সাহায্যের জন্য ডাকিবে না এবং আল্লাহ সুবহানাতায়ালার ব্যবস্থাপনায় অন্য কাউকে এতখানি প্রভাবশালী বা শক্তি মান মনে করিবে না যে, তাহার সুপারিশে মহান আল্লাহ তায়ালার ফায়সালা পরিবর্তন করিতে বাধ্য। কারণ মহান আল্লাহ তাআলার রাজ্যে সকলেই ক্ষমতাহীন প্রজা মাত্র।
ঘ) মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সম্মুখে মাথা নোয়ানো যাবে না এমনকি কারো উদ্দেশ্যে মানব করাও যাবে না। কেননা এক আল্লাহ সুবহানাতায়ালা ব্যতীত ইবাদাত ( অর্থাৎ দাসত্ব, আনুগত্য ও উপাসনা) পাবার অধিকার আর কারো নেই।
ঙ) মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও বাদশা, রাজা, ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লওয়া যাবেনা, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করবে না। কেননা সমগ্র রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিমুখের সার্বভৌমত্বের অধিকারী আল্লাহতালা ব্যতীত অপর কাহারও নেই।
ঈমান ও আকিদার দ্বিতীয় অংশ হলঃ
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহ তাআলার রাসুল হওয়ার অর্থ এই যে, এই বিশ্ব জগতের একমাত্র বাদশা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে বিশ্বের সকল মানুষের প্রতি সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে একমাত্র নির্ভুল হেদায়েত ও আইন বিধান প্রেরণ করেছেন এবং এই হৃদয়ত ও আইনবিধান অনুযায়ী কাজ করার পূর্ণাঙ্গ বাস্তব দিক নির্দেশনা জারি করার জন্যই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহান আল্লাহর রাব্বুল আলামিন নিযুক্ত করেছেন। যেকোনো ব্যক্তি বা দল এই পরম সত্য ও প্রকৃত বিষয়কে জানার পরে মানিবেন তাহার জন্য নিম্ন বর্ণিত কর্তব্যগুলো অবশ্যই পালন করতে হবে।
ক) প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে যে হিদায়াত ও আইনবিধান ক্রমান্য সূত্রে পাওয়া যাবে তা দ্বিধাহীন ও অকুন্ঠ চিত্তে গ্রহণ করিতে হবে।
খ) যেকোনো কাজ করার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এবং প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হতে পাপ তো আদেশ ও নিষেধকে যথেষ্ট মনে করতে হবে।
গ) মহান আল্লাহ তাআলার কিতাব ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নতের বিরোধী কোন নেতৃত্ব মানিয়া নেওয়া যাবে না।
ঘ) জীবনের সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহ তাআলার কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতকে অকাট্য ক্রমান্য বিশ্বস্ত সূত্র ও নির্ভুল জ্ঞানের একমাত্র উৎস রূপে গণ্য করিতে হইবে।
ঙ) ব্যক্তিগত, পারিবারিক বংশীয় ও জাতিগত, দলীয় ও সম্প্রদায়গত, আঞ্চলিক ও ভাষাগত তথা সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও বিভেদ হতে মন মগজকে মুক্ত ও পবিত্র রাখা। এবং কাহারো ভালোবাসা বা অন্ধভক্তিতে এমনভাবে বন্দী না হওয়া যার দরুন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপস্থাপিত সত্যের প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তির উপর জয় কিংবা তাহার প্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া দাঁড়াতে পারে।
আরো জানুন > ইমান শব্দের অর্থ কি
চ) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন চরিত্রকে কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা এবং ওহাকেশ সকল ব্যাপারে সত্যের একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে মেনে নিতে হবে।মহান আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত আর কাহাকেও ভুলের ঊর্ধ্বে মনে করা যাবে না। কাহারো অন্ধ গুলামিতে নিমজ্জিত না হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই আল্লাহতালার দেওয়া মাপকাঠিতে যাচাই ও পরোক্ষ করিয়া যাহার যেই মর্যাদা হইবে তাকে সেই মর্যাদা দিতে হবে।
No comments
Post a Comment